সকাল থেকে বাজছিল ‘বিসমিল্লার পাগলা সানাই’। বিয়ের প্যান্ডেল ভরে উঠেছিল রজনীগন্ধার মালায়। নানা রং-বেরঙের আলোতে ঝলমল করছিল চারিদিক। অতিথি আপ্যায়নে আর পাঁচটা বিয়ের বাড়িকে ছাপিয়ে গেছে।
এই বিয়ের পাত্র-পাত্রী অন্যদের থেকে আলাদা। তারা শরীরে বয়ে চলেছেন এইচআইভি পজিটিভের ভাইরাস। এই তরুণ-তরুণীর সাত পাকে বাঁধা পর্বের সাক্ষী হলো ভারতের সোনারপুরের গোবিন্দপুর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এইচআইভি পজিটিভ দুজনের বিয়ে পরিবার আদৌ মেনে নেবে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তবে সব বাধা কাটিয়ে গতকাল রোববার চার হাত এক হয়েছে। ওই সময় তাদের পাশে ছিল সোনারপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
জানা যায়, তিন বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে তরুণীর ঠাঁই হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গোবিন্দপুরের একটি হোমে। তখনও তিনি জানতেন না নিজের এইচআইভি পজিটিভের কথা। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি সামনে এলে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও চিকিৎসার জন্য নিয়মিত কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে হতো তরুণীকে। সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ হয় উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা এক যুবকের।
হাসপাতালের ছোট ঘরে চিকিৎসা করাতে আসা দুজনের আলাপ গড়ায় ভালোবাসায়। অবশেষে দুজনে সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। যুবকের পরিবারও তাদের এই সিদ্ধান্তে বাধা দেয়নি। এগিয়ে আসে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তারাই।
দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, মেদিনীপুরের সুনীতা যাদব ও উত্তর ২৪ পরগনার সৌমিত্র গায়েন দুজনই এইচআইভি পজিটিভ হলেও তাদের বিয়েতে কোনো কার্পণ্য করেননি উদ্যোক্তারা। কারণ তারাও মানসিকভাবে অত্যন্ত ‘পজিটিভ’।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুরের গোবিন্দপুরে ‘আনন্দ ঘর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের নিয়ে। যে সমস্ত পিতা-মাতা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাদের বাচ্চাদের এই হোমে রেখে বড় করা হয়। সেই রকমভাবেই এই হোমে উপস্থিত হয়েছিল মেদিনীপুরের সুনীতা যাদব।