জাতীয়

হাত-পা অচল রুমকি বিসিএস ক্যাডার হতে চায়

(Last Updated On: )

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ইশানগাতী গ্রামের আব্দুর রউপ মোল্যা ও আবেদা বেগম দম্পত্তির মেয়ে রুমকি খানম। জন্ম থেকেই রুমকির দুই হাত ও পা অচল। তবুও দমেনি সে। পড়াশোনা করে হতে চায় বিসিএস ক্যাডার।

ছোটবেলায় রুমকিকে পড়াশোনা করাতে চাননি তার মা-বাবা। তবে মেয়ের অদম্য আগ্রহে তাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হাত-পা অচল হলেও রুমকির শ্রবণ ও প্রখর মেধায় আজ সে অনেক এগিয়ে।

২০২২ সালে এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পেয়েছে রুমকি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর সব কয়টিতে এ প্লাস পেয়েছেন। তবে ভালো ফল করেও পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে রুমকি ও তার পরিবার।এসএসসিতে জিপিএ-৩ দশমিক শূন্য ৬ এবং জেএসসিতে পেয়েছিলেন ৩ দশমিক ৭৫।এস এস সি ও জেএসসিতে জিপিএ কম থাকায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া হয়নি রুমকির।

আবদুর রউফ মোল্যা ও আবেদা বেগমের রুমকিসহ আরো দুটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে রেজওয়ান ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই পড়ে, ছোট মেয়ে রুবায়া খানম এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। তাদের এই লেখাড়ার খরচ যোগাতে তার পিতা হিমসিম খাচ্ছেন।

জন্ম থেকেই রুমকি প্রতিবন্ধী। তার দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ও শুকনো। কোনো হাতে–পায়ে শক্তি নেই। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। গোসল, খাওয়াসহ সব কাজেই তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। তার চলাফেরা হুইল চেয়ারে। ছোট বেলায় রুমকি বাম হাতে কলম ধরে বাম পায়ের সহযোগিতায় লিখেন। তবে বড় হওয়ার পর মুখে কলম ধরে ডান হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে লেখেন। তার পরও রুমকির হাতের লেখা বেশ সুন্দর। মুখে কলম ধরে ছবিও আঁকেন রুমকি।

রুমকি বলেন, ছোটবেলা থেকে তার ইচ্ছা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রথম পছন্দ। পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে সে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করতে চায় রুমকি।

রুমকি আরো বলেন, আমার ছাত্র জীবনে কখনো প্রাইভেট পড়িনি। যতটুকু করেছি নিজের চেষ্টায় ও ইচ্ছায়। সমাজের কোনো বৃত্তবান ব্যক্তি আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানি। এমনকি আমি কোনো প্রকার ভাতাও পাই না। একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে তো প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাও পাই না। আমার একটা চাওয়া আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই এবং লেখাপড়া শেষ করে একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হতে চাই। আমি আমার লেখাপড়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজার সহোযোগিতা কামনা করছি।

রুমকির মা আবেদা সুলতানা বলেন, আমার মেয়ের খুব ইচ্ছা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তিন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই রুমকি বাবার। আর রুমকির জন্য খরচ বেশি হবে।

রুমকির বাবা আবদুর রউফ মোল্যা বলেন,তার শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ছোটবেলায় রুমকির পড়শোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার কাছে আমরা হার মেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আরও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।