জাতীয়

‘হিজড়া’ পরিচয়ে সংসদে বসার আইনি বাধা কাটল


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

এখন থেকে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠীও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে পাঠাতে পারবে। কেননা, সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ পরিচিতির জায়গায় মহিলা ও পুরুষ লিঙ্গের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ‘হিজড়া’ শব্দটিও যুক্ত করলো কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করে বিধানটি সম্প্রতি যুক্ত করেছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৯৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিধিমালার ১১ বিধি অধিকতর সংশোধন করল নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অংশের দ্বিতীয় খণ্ডে ১১ নম্বর বিধিটি টিক চিহ্ন দিয়ে পূরণ করতে হয়। এই বিধিতে প্রার্থীর লিঙ্গ পরিচিত উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। যেখানে আগে পুরুষ ও মহিলা ছিল, এখন যুক্ত হলো ‘হিজড়া’।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে গত ৩০ নভেম্বর সাক্ষাৎ করে ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সংগঠন ‘সুস্থ জীবন’। সংগঠনের চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ সে সময় তাদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে দাবি তোলেন— ‘জাতীয় সংসদে নারী আছে, পুরুষ আছে, আমরা কই? কাজেই আমাদের একজন দরকার। ’

বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যাররা আমাদের বলেছে—কী করা যায় আমরা দেখবো। এছাড়া দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক করতে বলেছেন। সংবিধান কী বলে এই রকম দিকগুলোই তারা দেখবেন। ’

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকের পর কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে। পরবর্তীতে আইনে কীভাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়টিও খুঁজে বের করেন। যার ফলশ্রুতিতেই আনা হলো সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় সংশোধন।

এই সংশোধনের ফলে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব পরিচয়েই সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র থেকেও যেমন তারা প্রার্থী হতে পারবেন, তেমনি দল থেকেও এই পরিচয়ে প্রার্থী হতে পারবেন।

এদিকে সংসদ নির্বাচনের বিধিমালায় এই সংশোধন আনা হলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় এখনো বিষয়টি যুক্ত করা হয়নি।

হিজড়া জনগোষ্ঠী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কেএম নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো আইন সংশোধন করে ‘হিজড়া’ শব্দটি ভোটার নিবন্ধন ফরমে যোগ করেন। বর্তমানে ইসির সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে হিজড়া ভোটার রয়েছে ৮৩৭ জন। ২০১৯ সালের আগে হিজড়াদের ভোটার হতে হলে মহিলা কিংবা পুরুষ, এই দু’টির যে কোনো একটি লিঙ্গ বেছে নিতে হতো। এতে পরিচয় শনাক্তের জন্য সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন প্রয়োজন হতো, যা তাদের নানা বিড়ম্বনায় ফেলতো।

বিধিমালা সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় পার্বতী আহমেদ বলেন, ‘অনেক খুশি হয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। ইসিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি আশাকরি এই সুযোগ শুধুমাত্র ইসিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দলগুলোও এবার এগিয়ে আসবে। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা নির্বাচন করতে গেলে টাকার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে যদি দল থেকে নমিনেশন দেয়, সে ক্ষেত্রে হয়তো পারবো। অন্যথায় আমাদের হিজড়াদের প্রার্থী হওয়া ইমপসিবল। দলীয়ভাবে সাপোর্ট লাগবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা আপাতত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে আমাদের প্রতিনিধি চাই। ঈদের পর এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেবো। ’