জাতীয়

স্মার্ট কার্ড: ৪৫ বছরের যুবককে বানালো ১৪৫, পুরুষকে নারী

(Last Updated On: )

বয়স সবেমাত্র ৪৫, কিন্তু স্মার্ট কার্ডের তথ্য বলছে ১৪৫। নিজের বয়স ১শ বছর বেশি হয়ে যাওয়ার এ ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কাজী মোহাম্মদ আকরাম।

চট্টগ্রামের ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলি উত্তর সরাইপাড়া কাজীর দিঘি কাজি বাড়ির এই বাসিন্দা বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় পড়ে সিম কেনা এবং করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না।

শুধু তিনি নন, এরকম অনেক অভিযোগ আসছে স্মার্ট কার্ড গ্রহণকারীদের কাছ থেকে। ওয়ার্ড অফিস থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও সংশোধন করা যায়নি কর্তৃপক্ষের এই ভুল।

কাজী মোহাম্মদ আকরাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাকে ১৪৫ বছরের প্রবীণ ব্যক্তি বানিয়ে দিয়েছে এই স্মার্ট কার্ড। আমার জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল। কিন্তু কার্ডে আছে ১৮৭৬ সাল। পুরো নামটাও আসেনি, শুধু লিখেছে আকরাম খান।

রাসেল পিনারো নামের আরেক ব্যক্তি তার জন্ম তারিখে গরমিলের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার জন্ম ১৯৮৪ সালে। কিন্তু ওরা দেখিয়েছে ১৮৮৪ সাল। মো. তিতুমীর আকতার নামের একজন তার জাতীয় পরিচয় পত্রে ইংরেজি নামের সঙ্গে বাংলা নামের গরমিল এবং তাকে নারী হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে দাবি করে বলেন, ‘ওই কার্ডে আমার স্বামীর নাম লেখা হয়েছে মৃত শেখ মো. দলিলুর রহমান’।

রাউজানের স্কুল শিক্ষক শুকলা আচার্যের জাতীয় পরিচয়পত্র তিন বছর ধরে অনলাইনে ‘অকার্যকর’ দেখানো হচ্ছিলো। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পরামর্শে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করেন। কিন্তু সার্ভার থেকে তথ্য মুছে যাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে গত ১৮ মার্চ কার্ডটি সচল হয়।

হাটহাজারীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গুন্নু মিয়া সারাং বাড়ির মো. জানে আলমের ছেলে জাহেদুল আলম। ২২ বছরের এই যুবক গতবছর স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে অবাক হয়ে যান। কার্ডে তার ছবির পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে এক অপরিচিত নারীর ছবি।

ভুক্তভোগী জাহেদুল আলম জানান, ২০১৫ সালে ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন তিনি। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আসা জাতীয় পরিচয়পত্রে তার ছবির পরিবর্তে দেখেন এক নারীর ছবি। পরে ওই বছরের ১৮ নভেম্বরে সোনালী ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে পরে নিজের ছবি সম্বলিত সংশোধনকৃত জাতীয় পরিচয়পত্রও পেয়েছেন। কিন্তু স্মার্ট কার্ডে আগের নারীর ছবিটিই রয়ে গেছে।  

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০০৮ সাল থেকে ভোটারদের এনআইডি দেওয়া শুরু হলে নানান ভুল চোখে পড়ে। এই ভুলের জন্য নির্বাচন কমিশনের কর্মীরাই দায়ী। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান এনআইডি কার্ড তৈরিতে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেছে, তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। এনআইডির ভুল তথ্যই উঠে আসছে স্মার্ট কার্ডে। অদক্ষ কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। তথ্য সংশোধনের জন্য টাকা দিয়েও মাসের পর মাস, অনেক ক্ষেত্রে কয়েক বছরও লেগে যাচ্ছে।  

তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, এনআইডি সংশোধন ভোটারের নিজ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে করতে হয়। এই সমস্যার সমাধান সম্পর্কে উপজেলা কার্যালয় থেকে খোঁজখবর নিলে গ্রাহককে অযথা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।  

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে আবেদন করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এসময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্রায় ৮ হাজার নাগরিক সংশোধনীর জন্য আবেদন করেন। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হলে দেখা যায় ভুল রয়ে গেছে এই কার্ডেও।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন উইং সূত্র জানায়, স্মার্ট এনআইডি কার্ডগুলো সরাসরি ঢাকা থেকে এবং লেমিনেটিং করা কার্ডগুলো জেলা পর্যায়ের কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি https://services.nidw.gov.bd/registration সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে নির্দেশনা মেনে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন কিংবা ছবি পরিবর্তন করা যাবে। যদিও এই পদ্ধতি কষ্টসাধ্য এবং সার্ভার জটিলতায় অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য অভিযোগকারীকে নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ও কাগজপত্র সহ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হয়। শিক্ষিত ব্যক্তির সার্টিফিকেট এবং অশিক্ষিত ব্যক্তির জন্ম সনদ, হলফনামা, কাবিননামা ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। বয়স ভুল সংক্রান্ত সংশোধনীর জন্য ২০০৮ সালের ভোটার যদি ২০১২ সালের জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়ে আসে, তাহলে তো জটিলতা সৃষ্টি হবেই।