স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু গত ৫০ বছরেও চট্টগ্রাম শহরে সরকারি কোনো স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। নগরীর ১৫টি সরকারি স্কুল-কলেজের মধ্যে ১৩টিই স্বাধীনতার পূর্বের। স্বাধীনতার পর মাত্র দু’টি সরকারি বিদ্যালয় পেয়েছে নগরবাসী। তাও এ দু’টি বিদ্যালয় প্রথমে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পরবর্তীতে একটি ১৯৭৪ সালে এবং অপরটি ২০১৭ সালে জাতীয়করণ করা হয়। ৭০ লাখের বেশি নগরবাসীর জন্য মাত্র ১০টি সরকারি বিদ্যালয় এবং ৫টি কলেজ অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, গত কয়েক বছর ধরে নগরীতে নতুন সরকারি স্কুল স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলো বিভিন্ন মহল। ২০১৮ সালে নগরীতে দু’টি ১০ তলা ভবন বিশিষ্ট বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। বিদ্যালয়ের জন্য দু’টি জায়াগও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনো জায়গা নির্ধারণের মধ্যেই বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ আটকে রয়েছে বলে জানা যায়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম নগরীতে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।
জানা যায়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডে এই ১০টি বিদ্যালয় স্থাপিত। বাকি ৩৫টি ওয়ার্ডে সরকারি কোনো বিদ্যালয় নেই। এরমধ্যে- নগরীর ৮ নং শোলকবহর ওয়ার্ডে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ অবস্থিত। ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত। ৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত। ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে গভ. মুসলিম হাইস্কুল অবস্থিত। ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত। ২১ নং জামালখান ওয়ার্ডে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয়। প্রায় দেড় কোটি লোক বসবাসকারী রাজধানী ঢাকায় ৪০ টির বেশি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। অন্যদিকে, ৭০ লাখের বেশি লোকের জন্য সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ১০টি। সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় চট্টগ্রামে কোনো সরকারি বা প্রতিষ্ঠিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি বলে অভিযোগ শিক্ষাবিদদের।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের প্রয়োজনের প্রতি বর্তমান নীতি-নির্ধারক যারা রয়েছেন, তারা কতটুকু মনোযোগী সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নে উচ্ছ্বাস দেখা যায়, কিন্তু মানব সম্পদ তৈরির কাজে কোনো অগ্রগতি নেই। যারা দেশ পরিচালনা করছেন, এসব বিষয় নিয়ে তো তাদের ভাবতে হবে। ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রামবাসী শিক্ষার প্রতি অনুরাগী ছিলেন, এমন একটি ভাবমূর্তি ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমার মনে হচ্ছে, আমরা এখন সে জায়গা থেকে সরে আসছি। এখন দোকানপাট নির্মাণ কিংবা বাণিজ্যিক বিষয়ের প্রতি আমাদের মনোযোগ বেশি।
তিনি আরো বলেন, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবগুলো একই এলাকায় হলে দূরদূরান্তের অনেকেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ গ্রহণের সুযোগ পাবে না। তাই নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র দক্ষ জনবল না থাকায় প্রবাসে আমাদের ২০ লাখ শ্রমিক যে আয় করেন, শ্রীলংকা ও ভারতের দুই লাখ শ্রমিক সে পরিমাণ আয় করেন। শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ থেকেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমাদের তো সেদিকে মনোযোগ নেই। আমদের নজর রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে।
মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকামুখী হচ্ছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে হাজার কোটি টাকার মালিক রয়েছেন। কিন্তু তাদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। তাই ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল গড়ে উঠছে না। এর দায় চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও রয়েছে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চট্টগ্রামে থাকতে চান না।