স্ত্রীকে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭)। তবে পুলিশি তদন্তে খুনের রহস্য উদঘাটন হলেও ততদিনে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রায় ১৭ বছর ধরে পলাতক থাকার পর ফেসবুক সূত্রে শনাক্ত করা হয় আশরাফকে।
অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। তিনি সাংবাদিক হিসেবে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে পারিবারিক কলহের জেরে আশরাফ তার শিশুপুত্রের সামনে শ্বাসরোধ করে নিজ স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে হত্যা করেন। হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালাতে নিহতের ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে আশরাফকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার ১২ দিন পর শিশুসন্তানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শ্বশুরের সহায়তায় জামিনে বের হন। এরপর হঠাৎ করে একদিন আশরাফ আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকে তিনি বাড়ি, কর্মস্থল ও স্বজনদের কারো সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেননি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সানজিদা শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে প্রমাণিত হলে ২৮ এপ্রিল আশরাফকে আসামি করে সোনারগাঁও থানানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর আদালত মামলার পলাতক আসামি আশরাফের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
আশরাফ পলাতক থাকায় গত ২১ ডিসেম্বর সোনারগাঁও থানা থেকে তাকে গ্রেফতারের জন্য র্যাবের সহায়তা চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফকে গ্রেফতারে রব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় মামলায় উল্লেখিত মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে বরিশালে একটি অভিযান চালানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার না করায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সিমটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে এটি এখন অন্যজন ব্যবহার করছেন।
এরপর র্যার সাইবার পেট্রলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশরাফের ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে এবং মাঠ পর্যায়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ফেসবুকে আসামি আশরাফের নামে দুটি পেজ পাওয়া যায়। যেখানে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেছেন। তার ছবি স্থানীয়দের দেখালে তিনিই স্ত্রীর খুনি আশরাফ বলে নিশ্চিত হয় র্যাব। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আশরাফ হোসেন ১৯৯৮ সালে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে বি.কম পাস করা আশরাফ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন ২০০১ সালে। ২০০৩ সালে ভিকটিমকে বিয়ে করেন এবং কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস শুরু করেন।
স্ত্রীকে খুনের পর আশরাফ ছদ্মবেশে আশুলিয়ায় বসবাস শুরু করেন এবং পুনরায় বিয়ে করেন। গ্রেফতার এড়াতে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে সাংবাদিকতা পেশায় জড়ান তিনি। ২০০৬ সালে সাপ্তাহিক মহানগর বার্তা’র সহকারী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন।
২০০৯ সালে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তীতে সংবাদ প্রতিক্ষণ পত্রিকায় যুক্ত হন, ২০১৩-১৪ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন।
২০১৫-১৬ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সহসম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০২০ সালে দৈনিক সময়ের বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২১-২২ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের পুনরায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরে যান। বর্তমানে তিনি আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন।