চট্টগ্রাম

সাংস্কৃতিক কর্মী গায়ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু : ধামাপাচায় তৎপর শ্বশুর পক্ষ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

সাংস্কৃতিক কর্মী গায়ত্রী চৌধুরী(৩৫);র রহস্যজনক মৃত্যুর পর থলের বিড়াল বের হয়ে যাওয়ার ভয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের দিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর একটি চক্র। চক্রটি সাংস্কৃতি কর্মী গায়ত্রী চৌধুরীর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। গায়ত্রী চৌধুরীর বাপের বাড়ির অসহায় পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে যাতে তারা কোন ধরণের মামলা না করতে বিভিন্নভাবে হুমকি এবং টাকার লোভ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

গায়ত্রী চৌধুরীর পরিবার অভিযোগ করেন,গায়ত্রীর স্বামী রিটন চৌধুরী সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী হলেও  নিজেকে সাংবাদিক,সংগঠক ও সরকার দলীয় কর্মী পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে রেহাই পেতে কিছু গণমাধ্যম কর্মীকে ম্যানেজ করে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করে আত্মহত্যার বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।এইসব গণমাধ্যম কর্মীদের নির্দেশনায় অনুযায়ী অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন ধরছে না ।

গায়ত্রী চৌধুরীর পিতা তপন দাশের অভিযোগ, মেয়ের জামাই রিটন চৌধুরী(৪৯) তার মেয়েকে নির্যাতন করে মারধর করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করে আসছে। মেয়ের হত্যার বিচার চেয়ে মেয়ের জামাই রিটন চৌধুরীসহ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে থানায় গেলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে এখনো পর্যন্ত মামলা করতে পারেনি বলে জানায়। গায়ত্রী চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনা সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। গায়ত্রী চৌধুরীর হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ছে কয়েকটি সংগঠন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশে সিপিডিএলের একটি ভবনের ৬ তলায় গায়ত্রী চৌধুরী ও তার স্বামী রিটন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। ঘটনার দিন গায়ত্রী গত ১১ জুলাই সোমবার বেলা ১২টায় তার বাপের সাথে মোবাইলে কথা হয়। বিকাল ২টায় নিজের ফেসবুকে পুজোর ছবি আপলোড দেন। আড়াইটার দিকে মেয়ের জামাই রিটন চৌধুরী হঠাৎ ফোন করে শ্বাশুড়কে তার মেয়ে অসুস্থ চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসার অনুরোধ করেন।

জামালখান সিপিডিএল এন এম মোস্তেজা ভবনের দুইজন সিকিউিরিটি গার্ড মোহাম্মদ সোলায়মান এবং মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জানান, ঘটনার সময় রিটন চৌধুরী ও তার দুই ছেলে বাসায় অবস্থান করছিল। পরিবারের সবার উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে। আমাদেরকে তার ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য সিকিউরিটি সালাউদ্দীন খবর দিলে গিয়ে দেখি লাশ ফ্লরে পড়ে আছে। নাক আর মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে রক্তাত্ব অবস্থায়। রিটন চৌধুরী ফ্লাটের তালা ভেঙ্গে তার স্ত্রী গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুঁলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে দাবি করলেও এসময় আশ পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের কাছে বিয়ষটি গোপন রাখেন। দরজার তালা ভাঙ্গার কোন শব্দও পাশের ফ্লাটের লোকজন শুনেনি। মৃত দেহটি নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে পোস্ট মর্টেম করে রাউজান পৌরসভার জগতমল্ল পাড়া জান আলীর হাটে নিয়ে দাহ করেন।

ঘটনর পর থেকে সিপিডিএলর উক্ত ভবনের গিয়ে দেখা গেছে রিটন চৌধুরী ফ্লাটে তালা ঝুঁলে আছে। লাশ রাউজানে দাহ করার পর তারা কেউ এখনো ফ্লাটে আসেনি বলে সিকিউিরিটিরা জানায়। ঘটনার পর থেকে রিটন চৌধুরী আত্মগোপনে রয়েছে। তার আত্বীয় স্বজনেরাও রিটন চৌধুরী কোথায় রয়েছে সঠিকভাবে বলতে পারছে না। বিয়ের পর থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী গায়ত্রী চৌধুরীকে জামাইসহ শ্বাশুর বাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময় নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

রাউজান পৌরসভার জগতমল্লপাড়ার জালানীহাট এলাকার মৃত নেপাল চৌধুরীর পুত্র সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী রিটন চৌধুরীর সাথে পটিয়া পৌর সদরের সুচক্রদন্ডী এলাকার তপন দাশের মেয়ে গাত্রী দাশের সাথে ২০০৪ সালে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স প্রায় ১৭ বছর নবম শ্রেনিতে পড়ে। বিয়ের আগ থেকে  গায়ত্রী চৌধুরী স্কুল কলেজে পড়ার সময় পটিয়া পৌরসদরস্থ বর্ণরেখা খেলাঘর আসরসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিয়ের পর চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে নিয়মিত সংগীত চর্চা করতেন।

এ বিষয়ে গায়ত্রীর পিতা তপন দাশ জানান, আমার মেয়েকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। কোন আত্মহত্যা করেনি, তারা আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করতেছে, ঘরে মেয়ের জামাই উপস্থিত ছিল। তার উপস্থিতে কিভাবে আত্মহত্যা করল সঠিক তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। টাকার বিনিময়ে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট তাদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করবে বলে বিভিন্ন জনকে বলাবলি করতেছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য রিটন চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিং বাজলেও রিসিভ করেনি। বিভিন্ন মোবাইল থেকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবির, জানান, ঘটনাটি ঘটনার পর আমি নিজেই লাশ পোস্ট মর্টেম রির্পোটের জন্য পাঠিয়েছি। রিপোর্ট আসার পর ঘটনার মামলা কোন দিকে যাবে বলা যাবে। তবে গৃহবধুর পরিবারের পক্ষ থেকে যদি হত্যা মামলা করতে থানায় আসে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তকে এখনো পর্যন্ত এ ধরণের অভিযোগ নিয়ে কেউ আমাদেও কাছে আসেনি।