ফিলিস্তিনিদের অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির পক্ষেই বাংলাদেশ। ফলে দখলদারি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই বাংলাদেশ সেটি ঘোষণা দিয়েই জানান দেয়। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ইসরায়েলের স্বীকৃতিও গ্রহণ করেনি ঢাকা। বর্তমানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের আলোকে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে স্বীকৃতি জানানোর মৌলিক অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। যে প্রস্তাবে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ববর্তী সীমানা ঠিক রেখে দুটি রাষ্ট্র তৈরি এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করার বিষয়টি রয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতিদানকারী বিশ্বের ১৩৭ রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বর্তমানে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি শুধু ইসরায়েল ব্যতিরেকে বিশ্বের যে কোনো দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। এতদিন বাংলাদেশের ইস্যুকৃত পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা ছিল ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’। তবে সম্প্রতি নতুন ইস্যু করা ই-পাসপোর্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। বরং ইস্যু করা নতুন ই-পাসপোর্টে লেখা রয়েছে- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। এখানে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ দুটি নেই। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপপরিচালক রাষ্ট্রদূত গিলাড কোহেনের একটি টুইট ওই আলোচনাকে আরও উসকে দিয়েছে। বাংলাদেশ ইসরায়েলের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মন্তব্য করে বিষয়টি স্বাগত জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় ওই টুইটে।
তবে পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হলেও বাংলাদেশিদের সে দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রবিবার বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণে আগের মতোই নিষেধাজ্ঞা আছে। ইসরায়েল বিষয়ে আগের অবস্থান সেখান থেকে বাংলাদেশ সরে আসেনি এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবস্থানেই অবিচল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দটি তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য। তার মানে এই নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিতই থাকছে। আট দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জিইয়ে থাকা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। বাংলাদেশ এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি, ফলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। বরং ফিলিস্তিনকে দূতাবাস করতে ঢাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। আবার সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ড ও গাজায় বেসামরিক লোকজনের ওপর দখলদার ইসলায়েলি বাহিনীর সহিংসতার নিন্দাও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে নেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আগে যে রকম ছিল, এখনো তাই থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে আমরা পাসপোর্টে এক্সসেপ্ট ইসরায়েল শব্দ দুটি তুলে দিচ্ছি।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, ‘গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে গত কিছু দিন ধরেই আলোচনা চলছে। সারাবিশ্ব যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে, তখন এই সংবাদ বিব্রতকর। তবে পাসপোর্র্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ বাদ দিলেও ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে না। বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে। ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িকভাবে এখন ইসরায়েল ভ্রমণ করা সম্ভব হলেও সরকারিভাবে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক তাদের সঙ্গে হবে না।