জাতীয়

শিকলবন্দী শংকরীর ২০ বছর কাটলো টয়লেটেই


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

জীবনে আঁধার নেমে আসে, কখনো কখনো স্বপ্নগুলি রঙিন পাখায় ডানা মেলে। মেধার রাজ্যে প্রগতিশীল নারী, মানসিক ভারসাম্যহীনতায় এখন কাতর। তেমনি এক মেধাবী নারী নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দী মানসিক ভারসাম্যহীন শংকরী গুহ। সে পৌর শহরের আমলাপাড়া শম্ভুলাল গুহের তৃতীয় সন্তান। ওর বড় দুই বোন, ছোট এক ভাই রয়েছে। মেধাবী শংকরী গুহের জীবন কাটছে টয়লেটে। পরনে কালো রঙের পুরাতন জামাটি ছিঁড়ে পুরো শরীর একাকার হয়ে গেছে। টয়লেটের এক কোনে একটি মগ রয়েছে। দূর থেকে প্রায় সময় খাবার পানি দিয়ে আসে ওর স্বজনরা। মাথার চুল শক্ত হয়ে বেঁধেছে জটলার মুটি।

মেধাবী ওই শিক্ষার্থী পৌর শহরের বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন তিনি। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় পড়ালেখা।

২০০১ সালে হঠাৎ করে একদিন নাকের সমস্যা দেখা দিলে কয়েকদিনের ব্যবধানে ওই সমস্যাটি রূপ নেয় টিউমারে। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা করালে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন তবে, বেশকিছুদিন পরে আচরনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় শিকলবন্দী জীবন। কখনো মোটা রশি কিংবা শিকল বেঁধে শুরু হয় আটকে রাখার চেষ্টা। পাগল মেয়েকে কোনোরকম শান্ত রেখে দেখভাল করতেন মা।

২০১৩ সালের শেষের দিকে মায়ের মৃত্যু হলে সংসারের পুরো বোঝা কাঁধে পড়ে ছোট ভাই জীবন লাল গুহের। স্থানীয় একটি প্যাথলজিতে সামান্য পিয়নের চাকরি করে কোনোরকম সংসার চালিয়ে গেলেও বোনের চিকিৎসার অর্থ যেন কোনোভাবেই যুগিয়ে উঠতে পারেননি। ভাঙাচোরা টিনের একটিমাত্র ঘর। ঘরের দুটি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন ৫ সদস্যের পরিবার। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর ঘাটের সাথে পরিত্যক্ত টয়লেটের উপর টিনের বেড়া দিয়ে তার ভেতর মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে রাখছেন তিনি। এভাবেই একাকীত্ব দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন শংকরী। নিশ্চুপ থেকে কুটিরের ভিতর লুকিয়ে রাখেন, ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যান, বছরের পর বছর পেরোলেও গোসল নেই শংকরী গুহের। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা শংকরী কে এভাবেই এক ঘরের ভিতরেই দেখে আসছি। কখনোই তাকে বাহিরে আসতে দেখি নাই গোসল করতে দেখিনি। খাওয়া-দাওয়া পয়ঃনিষ্কাশন সবকিছু তিনি ওই কুটিরের ভিতরে করেন। কারও সাথে কোন কথা বলেন না তাছাড়া দুর্গন্ধের কারণে কেউ তার সামনেও যান না।

শংকরী গুহের ভাই জীবন লাল গুহ জানান, হঠাৎ করেই আমার বোন অসুস্থ হয়ে গেছে। নাকে একটু সমস্যা হয়েছিলো টিউমারের মতো এরপর থেকেই তার এই সমস্যা হইছে। ডাক্তার দেখাইছি ওষুধ খাওয়াইছি তারপরও কোনো কাজ হইছে না। প্রায় ২০ বছরের উপরে হয়ে গেছে তার এই মানসিক সমস্যা। তার এই অবস্থা দেখে তো আমার অনেক কষ্ট লাগে কিন্তু কি করবো। আমার তো কোনো সামর্থ্য নাই। সামান্য একটা চাকরি করে তাদের কোনো রকমে সংসার চলে। নিজের ঘর ভেঙে পড়তাছে এখন তার জন্য একটা ঘর করে দেবো তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। ৪/৫ জনের পরিবার চলার সমস্যা আর্থিক সংকট। তাই এখন তার কোনো চিকিৎসা করতে পারছি না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজিব উল আহসান জানান, মানবিক ওইসব বিষয়গুলো নিয়ে আগে থেকেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা অবশ্য এটা পরিদর্শন করব। মানসিক ভারসাম্যহীন শংকরী গুহের প্রয়োজনগুলো আমরা সরকারি স্কিমের ভেতর থেকেই তা মেটানোর চেষ্টা করবো। প্রাথমিকভাবে তার বাসস্থানের জন্য টিনসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি সে যদি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে।