চট্টগ্রাম

শাহ আমানতে পিসিআর ল্যাব বসানোর প্রক্রিয়া শুরু

(Last Updated On: )

অবশেষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও কোভিড পিসিআর ল্যাব স্থাপন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত একটি টিম বিমানবন্দরে ল্যাব ও নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপনের সম্ভাব্য স্থান সরেজমিনে যাচাই-বাছাইও করেছেন। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠানোর কথা রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আগামী এক মাসের মধ্যেই চালু করা যাবে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আরটি পিসিআর ল্যাবটি। এতে দুর্ভোগ ও হয়রানি ছাড়াই সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন আটকেপড়া প্রবাসীরা।

এর আগে গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেয়া হয়। একই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ল্যাব স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, বিআইটিআইডি ল্যাব ইনচার্জ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ, বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জাবেদকে টিমের সদস্য করা হয়। গতকাল সকালে তারা সরেজমিনে গিয়ে বিমানবন্দরের ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে সম্ভাব্য স্থান যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিমানবন্দরের বাইরে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ এবং ভেতরের ল্যাব স্থাপনের জন্য স্থান দেখে আসেন কমিটি। এ বিষয়ে কমিটি স্বাস্থ্য দপ্তরকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও, আজ বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তবে কয়টি ল্যাব স্থাপিত হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোন কিছুই জানাননি স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি ল্যাব স্থাপন হলেও, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। যা বেসরকারিভাবেই স্থাপন করা হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘সম্ভাব্য স্থান দেখে এসেছি। এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

বিআইটিআইডি ল্যাব ইনচার্জ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেখানো স্থান দেখে ল্যাব করার মতো যতটুকু জায়গা প্রয়োজন, তার একটি খসড়া দেখিয়ে দিয়ে এসেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

এদিকে, ঢাকায় ছয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কয়টি ল্যাব স্থাপন হবে কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান ল্যাব বসাবে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তই আসেনি। যদিও বিমানবন্দরটিতে ল্যাব স্থাপন করতে তোড়জোড় শুরু করেছে চট্টগ্রামের কয়েকটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোভিড পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে কি-না, এমন অনুমোদন এখনো মেলেনি। জানা গেছে, দুটি ল্যাবকেই অনুমোদন দেয়া হবে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘গঠিত টিম সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন শেষে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া মাত্রই তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। আসা করছি খুব অচিরেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ল্যাব চালু করা যাবে।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রবাসী চট্টগ্রামের। সেদেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য আমিরাত সরকারের নতুন নিয়মের কারণে চট্টগ্রামে আটকা পড়েছেন প্রায় এক লাখ প্রবাসী। ইতোমধ্যে কিছু কিছু প্রবাসী ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে আমিরাত ফিরলেও বেশিভাগ আটকে আছেন চট্টগ্রামে।

প্রসঙ্গত : গত ১২ মে থেকে করোনার কারণে বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়। এমতাবস্থায় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশে ছুটিতে আসা হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি আটকা পড়ে। এরমধ্যে সংক্রমণ কমে আসায় শর্ত দিয়ে গত ৩০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা উঠিয়ে দেয় আরব আমিরাত। শর্ত দেয়া হয়, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে র‌্যাপিড পিসিআর টেস্ট পদ্ধতিতে করোনার পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্টধারীরাই দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন এবং সেখানে পৌঁছে আরও একবার করোনা টেস্ট করাতে হবে। এরমধ্যে চলতি মাসের শুরুতেই ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনসহ কোভিড পরীক্ষার সুযোগ মিললেও চট্টগ্রামে তা এখনও হয়নি।