সাদা ভাত, গরুর মাংস, কলাই ডাল—এই তিনের গণভোজ হলো মেজবান। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই মেজবান যুক্তরাজ্যে পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।
‘গ্রেটার চিটাগং অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’ গত রোববার যুক্তরাজ্যে চতুর্থবারের মতো মেজবানের আয়োজন করে।
পূর্ব লন্ডনের সুপরিসর মেফেয়ার বেঙ্কুয়েটিং হলে আয়োজিত এই মেজবান উপলক্ষে প্রায় ৪০টি ডেকে (বড় পাতিল) রান্না হয়। মেজবানে অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মেজবানে হাজির হন অনেক প্রবাসী। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ-কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি চলে ভোজন উৎসব।
নাম ‘মেজবান’ হলেও খাবারে ছিল বৈচিত্র্য। আয়োজনে ছিল ভিন্নতা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আয়োজনকে করে তোলে উপভোগ্য। প্রবাসে নিজস্ব সাংস্কৃতিক আবহে প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দঘন দিন কাটানোর মোক্ষম উপলক্ষ হয়ে ওঠে এই মেজবান।
মেজবানে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। একদল খাচ্ছিল, তো আরেক দল দাঁড়িয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিল।
খাবারের জন্য অপেক্ষার এই দৃশ্য দেখে অতিথি কবি হামিদ মোহাম্মদ মজা করে বলে বসেন, ‘খাওয়ার জন্য এঁরা এমন করছেন কেন?’
জবাবে মেজবান তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, এটাই চট্টগ্রামের মেজবানের ঐতিহ্য। এটি হাজারো মানুষের ভোজ। এখানে আপ্যায়ন করে বসিয়ে খাওয়ানোর সুযোগ নেই। ফলে সবাই চেয়ার দখলের চেষ্টায় থাকেন।
আয়োজকেরা জানান, এবারের মেজবানে তিন হাজার লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত লোকসমাগম সাড়ে তিন হাজারে গিয়ে ঠেকে বলে তাঁদের ধারণা।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের কথা মাথায় রেখে মেজবানের খাবারে বৈচিত্র্য আনা হয়। খাবারের তালিকায় ছিল—সাদা ভাত, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, নলার ঝোল ও ছানার ডাল।
আয়োজকেরা জানান, এবার একসঙ্গে প্রায় ৬০০ জনের বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে ভোজন পর্ব। সাংস্কৃতিক পর্ব চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।
মেফেয়ার ব্যাঙ্কুয়েটিং হলের স্বত্বাধিকারী ওয়াজিদ হাসান বলেন, ‘আমার এখানে আগে বহু অনুষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু এমন আয়োজন আগে কখনো হয়নি। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়। গত রোববার দিনব্যাপী তা চলে। আমরা অন্তত ৪০টি ডেকে (বড় পাতিল) রান্নাবান্না করি।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ইসহাক চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কায়সার। সমবেত কণ্ঠ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারপর চলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
এবারের আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণ ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা প্রদান। সম্মাননা প্রদানের এই পর্ব পরিচালনা করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
গ্রেটার চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ আট জনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। মনোয়ার হোসেনকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।
অনুষ্ঠানে মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৪ সালে হয় প্রথম মেজবান। তারপর ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল। লন্ডনে এই মেজবানের প্রতি অন্যান্য জেলার লোকদের আকর্ষণ বাড়ছে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মেজবান চট্টগ্রামবাসীর শত বছরের ঐতিহ্য। আমরা এই ঐতিহ্য লালন করতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে এই আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
দিনব্যাপী এই আয়োজনে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন বিলেতের জনপ্রিয় বাঙালি শিল্পীরা। আয়োজনের সবশেষ আকর্ষণ ছিল র্যাফেল ড্র।