চট্টগ্রাম

রোগীভর্তি কমেছে ৪০ শতাংশ


Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )

কোভিড রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি শয্যা রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। চলতি মাসের প্রথম দিকেও হাসপাতালটির কোভিড ওয়ার্ডে ৩০০ শয্যার বিপরীতে প্রায় সাড়ে তিনশ’ জন রোগী ভর্তি নিতে হয়েছিল। অথচ গত দুই সপ্তাহ আগ থেকে হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা হচ্ছে। মূলত এ কয়দিনে কোভিড রোগী ভর্তি কম হওয়ায় ফাঁকা হচ্ছে সাধারণ শয্যা।

শুধু চমেক হাসপাতাল নয়, কোভিড রোগীদের পৃথক চিকিৎসা দেয়া হয় চট্টগ্রামের এমন সরকারি-বেসরকারি ২৮টি হাসপাতালে গত দুই সপ্তাহের রোগী ভর্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ কয়দিনে হাসপাতালগুলোতে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তির হার প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশজুড়ে চলা কঠোর বিধিনিষেদের কারণে সংক্রমণ হার কমেছে। ফলে রোগী ভর্তির সংখ্যাও কমছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণের আনা সম্ভব বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কোভিড ফোকাল পার্সন ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই মাসেতো শয্যা বাড়ানোর পরও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি এমন ছিল, বাধ্য হয়ে ফ্লোরেও রোগীদের সেবা  দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। আমাদের কোভিড ওয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ শয্যা খালি রয়েছে’।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ফোকাল পার্সন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দিনে দিনেই নতুন শয্যাও বাড়ানো হয়। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা অনেক কমেছে। এখন এক তৃতীয়াংশ শয্যা খালি রয়েছে। মূলত দীর্ঘদিনের যে লকডাউন ছিল, তার ফল পাওয়া যাচ্ছে এখন। এতে সংক্রমণ কমার পাশাপাশি রোগীদেরও ভর্তি কম হতে হচ্ছে’।

বেসরকারি হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখন অনেক সাধারণ শয্যা খালি রয়েছে। কিছুদিন আগে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকলেও এখন কমবেশ কয়েকটি হাসপাতালে তাও ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে। সর্বোপরি দুই সপ্তাহের আগের চিত্র এখন আর নেই’।

গত বছরের এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয় করোনার সংক্রমণ। এর প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। মাঝখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সর্বশেষ গত জুন থেকে ঊর্ধ্বমুখীতে রূপ নেয়। সর্বশেষ গত জুলাই মাসেই তা-ব চালায় এ সংক্রমণ। এ যাবৎকালের সংক্রমণ সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে জুলাই মাসে।

তবে চলতি মাসের দশ আগস্টের পর কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতির দেখা মিলছে। যা স্বস্তিকর হলেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ থেকে এখনো অনেক দূরে চট্টগ্রামের অবস্থান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহের বেশি ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণ হার ২০ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করছে। বিপরীতে মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু কমেনি।

এর আগে সংক্রমণের গতি ঠেকাতে প্রায় দীর্ঘ এক মাস বিধি নিষেধ আরোপের পর গত ১১ আগস্ট থেকে তা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে সব কিছুই স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও এ স্বাভাবিকতার মধ্যে রাস্তাঘাট, যানবাহন কিংবা হাট বাজারে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী এক মাস পর আবারও উন্নিত এ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ার শঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জুলাই মাসে চট্টগ্রামের রেকর্ড সংক্রমণ হার ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা দুই তৃতীয়াংশ কমেছে। বলা চলে গতমাসের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। দীর্ঘদিন যে বিধিনিষেধ ছিল, সেটির প্রভাব পড়েছে। আশা করছি সামনে আরও সংক্রমণ কমে আসবে। তবে মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, কিংবা আগের মতো যদি মাস্কব্যবহার না করে ও জড়ো হতে থাকে-তাহলে হয়তো আবারও বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মানার উপর জোর দিতে হবে’।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘সংক্রমণের হার পাঁচের নিচে নামা পর্যন্ত অবশ্যই উদ্বেগ থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘ বিধিনিষেদের ফল কিন্তু পেয়েছি। সংক্রমণ অনেকটাই নিম্নমুখী অবস্থানে আছে। কিন্তু যদি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে শঙ্কা থেকেই যাবে, আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে বেশি সময়ের প্রয়োজনও হবে না। মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে লকডাউন। যদিও দীর্ঘদিন ধরে নামকাওয়াস্তের বিধিনিষেধ ছিল। তবে এতে সন্দেহ নেই, যে ঢিলেঢালা হলেও এই লকডাউনের ফলে কিছুটা সুফল পাওয়া গেছে। এখন একমাত্র কাজ হবে, দ্রুতই মানুষকে টিকার আওতায় আনা। যত দ্রুত টিকা নিশ্চিত করা যাবে, তত আগেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে’।