Warning: strlen() expects parameter 1 to be string, array given in /home/khalinews/public_html/wp-includes/functions.php on line 262
(Last Updated On: )
একবার কল্পনা করুন। কেউ আপনার ব্রেইন নিয়ন্ত্রণ করছে। দেখছে এবং কথা বলছে। দাবি করছে মোটা অংকের টাকা। না দিলে হুমকি দিচ্ছে সব স্মৃতি মুছে ফেলার। কী ভাবছেন কোনো হলিউডের সিনেমার কথা বলছি। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। হারুনুর রশিদ (৩২) নামের এক যুবকের ব্রেইন হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে। হারুন নিজেই পুলিশের কাছে তার ব্রেইন হ্যাক করার কথা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি দুজনকে অভিযুক্ত করে থানায় জিডি করেছেন। সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলাও করেছেন।
মামলার তদন্ত করছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। হারুনের অভিযোগ, হ্যাকাররা তার ব্যাংক হিসাব ক্লোন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এখন তার ওপর রাত-দিন সাইবার টর্চার চলছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ‘মস্তিষ্ক থেকে সব স্মৃতি মুছে ফেলা’র হুমকি দেওয়া হয়েছে।
হারুন উপজেলার আলি আকবার ডেইল ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার বাসিন্দা এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি জানান, বছর তিনেক আগে শ্বশুরবাড়িতে ঘুমানো অবস্থায় তার শ্যালিকার সহযোগিতায় হ্যাকার চক্রটি ইনজেকশন পুশ করে তাকে অচেতন করে। এরপর তার মাথায় একটি ছোট ইলেকট্রিক যন্ত্র (কম্পিউটার ডিভাইস) বা নিউরো চিপ স্থাপন করে। এর আগে তাকে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে কিছু একটা খাওয়ায় তার শ্যালিকা আসমা উল হোসনা।
এরপর আনুমানিক ৪-৫ ঘণ্টা অচেতন অবস্থায় চলে যান তিনি। জাগার পর খেয়াল করেন মাথায় হাল্কা চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে হালকা রক্তপিণ্ডের মতো কিছু একটার অস্তিত্ব পান। এরপরই তিনি শ্যালিকাকে কি হয়েছে দেখতে বলেন। শ্যালিকা জবাব দেন, কোনো পোকার কামড়ে বা কোনো কারণে হয়তো একটুখানি রক্তের মতো দেখা যাচ্ছে।
হারুন বলেন, ‘এ ঘটনার পরদিন আমি একজন খুব পরিচিত কণ্ঠের গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাই। সেখানে আমাকে গালাগাল করা হচ্ছিল। ইতোমধ্যেই আমার ফেসবুক এলোমেলো হয়ে যায়। ব্যবহৃত আইফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাবজিসহ পাঁচটি গেমস ডাউনলোড হয়ে যায়। কয়েক দফায় আমার ব্যাংক হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ গায়েব হয়ে যায়। এরপর ক্রমাগত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। একান্ত আপনজনদের কেউই আমার এসব ভূতুড়ে বিষয় বিশ্বাস করা তো দূরের কথা হাসিঠাট্টার রসদ বানাতে থাকে আমাকে।’
তিনি বলেন, ‘পরে পরিচিত একজন আইটি বিশেষজ্ঞকে আমার আইফোনের বিচিত্র আচরণ ও ফেসবুকের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণহীনতার বিষয়টি শেয়ার করলে তার পরামর্শ অনুযায়ী Apple, google এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করে বার্তা পাঠাই। একপর্যায়ে নিশ্চিত হই Apple ID হ্যাক করে আমার Phone এর আইটিউনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে হ্যাকাররা।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা Low Frequency Micro-chip শনাক্তকারী উবারপব দ্বারা হারুনের মাথায় নিউরো চিপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এরপর বিদেশি একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একাধিকবার চেষ্টার পর এমআরআই করে হারুনের মাথায় নিউরো চিপ ধরা পড়ে। তবে তিনি এতদিন মনে করতেন তার শরীরের কোনো ধরনের কম্পিউটার ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট না করে তার ব্রেইন কন্ট্রোল করছে হ্যাকাররা।
দেখা গেছে, হারুন কোনো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন হাতে নিলে তার শরীর হাল্কা কেঁপে ওঠে। তার হাতের স্পর্শের পরপরই ফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাবজি গেমসসহ চার থেকে পাঁচটি ক্ষতিকর গেমস ডাউনলোড হয়ে যায়। হারুনের হাত দিয়ে স্পর্শ করা স্মার্টফোনটি মুহূর্তেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির বা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এতে ফোনে থাকা যাবতীয় ডকুমেন্ট ও তথ্য সহজে হ্যাকাররা পেয়ে যাচ্ছে।
হারুনের দাবি, কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আতিকুর রহমান নামের একজন শিক্ষার্থী তার (হারুন) শ্যালিকা আসমাউল হোসনার সহযোগিতায় নিউরো চিপ স্থাপন করে তার ব্রেইন হ্যাক করেছেন। এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ক্লোন করে প্রায় ২০ লাখের বেশি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
হারুণের ভাষ্য, বিদেশি একটি ‘ব্রেইন হ্যাকার’ চক্র বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে দেশি কিছু হ্যাকার। তারা ইসরাইল ও আমেরিকা থেকে আনা (ক্ষুদ্র কম্পিউটার ডিভাইস) চিপ টার্গেট করা ব্যক্তিদের শরীরে স্থাপন করে এবং যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অর্থও লুটে নিচ্ছে। আতিকুর রহমান সে দলের একজন। আতিকের মাথায়ও নিউরো চিপ রয়েছে। সে হ্যাকারদের সঙ্গে ব্রেইন টু ব্রেইন কথা বলতে সক্ষম। তাদের (হ্যাকার চক্র) মধ্যে নিয়মিত কথা হয়।
হারুন জানান, সম্প্রতি তাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে অপারেশন করে মাথা থেকে নিউরো চিপ ফেলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে হ্যাকার আতিকুর রহমান। তা না হলে তার (হারুন) মস্তিষ্ক থেকে সবকিছু মুছে ফেলে পঙ্গু করার হুমকি দিয়েছে। তবে আতিকুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হলেও এত এক্সপার্ট নই। তাছাড়া কোনো হ্যাকার চক্রের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই।’
হারুন আরও জানান, থানায় জিডির পাশাপাশি ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন তিনি। প্রথমে ভুয়া ও হাস্যকর উল্লেখ করে মামলাটি নিতে চায়নি ট্রাইব্যুনাল। পরে তার (হারুন) কথা শোনার পর মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি) তদন্তের ভার দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শামীম বলেন, বাদীর ফোনটি ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য পাঠানোর আগ মুহূর্তে লস্ট মুডে চলে যায়। বিবাদীর একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট জব্দ করা হয়েছিল। সেটিতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এ কারণে মামলাটি নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া যায়নি। তবে ভিকটিমের মাথায় যেহেতু এখন চিপের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে; তাই ভিকটিম চাইলে মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন।
কক্সবাজার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, এর আগে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে কাজ করা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। তিনি বলেন, সিআইডি ক্রাইম বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বিষয়টি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হবে। এ সময় তিনি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার পরামর্শ দেন।
যেভাবে মানব মস্তিষ্কে হানা দেয় হ্যাকাররা : মানুষের মস্তিষ্ক হ্যাক করে গোপন তথ্য চুরি করা যে সম্ভব, তার প্রমাণ আগেই দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীরা। তারা ২০১২ সালের শুরুর দিকে স্বল্পমূল্যের ইমোটিভ ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস বা ইমোটিভ বিসিআই ব্যবহার করে মানুষের ব্রেইন হ্যাক করতে সক্ষম হন। গবেষণায় সহযোগিতা করা স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকজনকে ইমোটিভ বিসিআই হেডসেট পরিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা। এরপর মস্তিষ্কের পি-৩০০ সিগন্যাল অনুসরণ করে সংগ্রহ করেন স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন গোপন তথ্য।
ইমোটিভ বিসিআই ব্যবহার করে স্বেচ্ছাসেবকদের মস্তিষ্ক থেকে সংগ্রহ করা ডেটা থেকে খুব সহজেই তাদের ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং কার্ড পিন নম্বর খুঁজে বের করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা তখন আশঙ্কা করছিলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর হ্যাকিং চালাতে পারে নানা অশুভ শক্তি।
২০১৩ সালের পর থেকে ব্রেইন হ্যাকিংয়ের অভিযোগে আমেরিকার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলার নথিপত্র পাওয়া গেলেও সর্বশেষ ফল কি হয়েছে তা জানা যায়নি।
মানুষের স্নায়ু-সংকেত নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি আয়ত্তে আসায় মস্তিষ্ক হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের বরাতে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট মাদারবোর্ডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাই দ্রুত নিরাপত্তা অবকাঠামো তৈরি করা প্রযোজন; যাতে আমাদের মস্তিষ্ককে আমাদের বিরুদ্ধে কেউ কাজে লাগাতে না পারে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক প্রকৌশলী হাওয়ার্ড চিজেক বলেন, ‘খুব কম সময় আছে। আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারি, তাহলে দেরি হয়ে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শামশুল ইসলাম খান বলেন, ‘ব্রেইন হ্যাকের বিষয়টি অবিশ্বাস্য এবং হলিউড-বলিউডের মুভির কোনো গল্পের মতোই মনে হচ্ছে।’ ক্যালিফোর্নিয়া ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত আমেরিকার একাধিক মামলার বিষয় সম্পর্কে দৃষ্টিপাত করা হলে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’