দীর্ঘদিন ধরে শাহাদাত নামে এক ব্যবসায়ী বলাৎকারের শিকার হয়ে আসছেন আসামি আদনান সিয়াম। প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে হত্যার পরিকল্পনা এবং শেষ পর্যন্ত ছুরিকাঘাতে হত্যা
এমনই ঘটনা ঘটেছে নগরের ডবলমুরিং থানাধীন দাইয়াপাড়া এলাকায়।
শনিবার (৬ আগস্ট) চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর ও পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসেন।
গত ১ আগস্ট চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার দাইয়াপাড়া এলাকার একটি মার্কেটের টয়লেট থেকে মুদি দোকানদার শাহাদাত হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডবলমুরিং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্তে নামে ডিবি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডবলমুরিং এলাকায় একাই থাকতেন ব্যবসায়ী শাহাদাত। তার মুদি দোকানে গিয়ে কেনাকাটার সূত্রে গত ৪-৫ মাস আগে পরিচয় জিসানের। এতে দুই জনের মধ্যে গড়ে উঠে সুসম্পর্ক। একদিন বাসায় ফিরতে জিসানের দেরি হলে, নিজ বাসায় ঢুকতে না পেরে ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেনের বাসায় আশ্রয় নেয়। ওই রাতে শাহাদাতের শয়ন কক্ষে জিসানকে বলাৎকারের চেষ্টা করে। কিন্তু এতে জিসান রাজী না হওয়ায় চুরির দায়ে মামলা করে জেলে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে বলাৎকার করে ব্যবসায়ী শাহাদাত। এর পর থেকে ক্রমাগত বলৎকারের শিকার জিসান অতিষ্ট হয়ে ক্রাইম পেট্রোল দেখে শাহদাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এমনকি ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা করতে নিউমার্কেট এলাকা থেকে ৪০০ টাকায় একটি টিপ ছুরি কিনে জিসান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, শাহাদাতকে খুন করার জন্য এই ছোরা নিজের সঙ্গেই রাখতো জিসান। খুন হওয়ার ২ দিন আগে গত ২৮ জুলাই রাতে জিসানকে দোকানের পিছনে নিয়ে বলাৎকার করে শাহাদাত। কিন্তু সাহস করতে না পারায় হত্যা করতে পারেনি জিসান। এরপর ৩১ জুলাই রাতে জিসানকে আবারও দোকানে ডাকে শাহাদাত। দোকান বন্ধ করে দোকানের পিছনে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে লাইট বন্ধ করে জিসানকে বলাৎকারের চেষ্টা করে। এসময় জিসান পকেট থেকে ছুরি বের করে কয়েক দফা ছুরিকাঘাত করে শাহাদাতকে হত্যা করে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর ও পশ্চিম) মুহাম্মদ আলী হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু না থাকায় প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে এবং আসামি গ্রেফতারে কাজ শুরু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আশ-পাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা, এলাকার নাইট গার্ডসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের নানামুখী তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি চলতে থাকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীর মোবাইলের কললিষ্ট পর্যালোচনা করে জিসানকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে আনোয়ারা থানার তেকোটা এলাকা থেকে মো. আদনান জিসানকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। এসময় শাহাদাতের চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলের পাশের একটি ঝোপঝাড় থেকে ছুরিটি উদ্ধার করা হয়।