চট্টগ্রাম

ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক যোদ্ধাই এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

(Last Updated On: )

‘আল্লাহর কী ইচ্ছা, গতবছর আমি এই দিনে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। আর এই বছর আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছি। এটাই আমার ভাগ্যে লেখা ছিল। সবাইকে একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সবার জন্য আমি দোয়া করি। আমার জন্যও সবাই দোয়া করবেন- আমি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নতুন ভবনের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কথাগুলো বললেন নগরের আগ্রাবাদ দাইয়াপাড়া এলাকার তরুণ মোস্তফা নুর বিপ্লব। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর গত ১১ মে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৩ মে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। একইদিন তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

৩২ বছর বয়সী বিপ্লব গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে অসংখ্য করোনা রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছিলেন। কিন্তু এখন ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তার নিজের জীবনই সংকটে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন বিপ্লব। তার ফুসফুসের ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে মোস্তফা নুর বিপ্লবকে দেখতে গিয়েছিলেন দুইবার। তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হওয়া যখন ভীতিজাগানিয়া ব্যাপার ছিল, সেই সময়গুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ফিল্ড হাসপাতালে কাজ করেছিলেন বিপ্লব। এখন সে নিজেই আক্রান্ত, শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, তার অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। ২০ লিটার অক্সিজেন যাচ্ছিল। সিটি স্ক্যান রিপোর্টে দেখলাম, তার ফুসফুসে ৩৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

এদিকে গত ১৫ মে নিজে অসুস্থ থাকার পরও ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে মোস্তফা নুর বিপ্লবের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন। একইদিন মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে বিপ্লবের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার ও চট্টগ্রাম সিটির প্রাক্তন কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু।

আজাদ তালুকদার বলেন, ‘গতবছর তিন মাসের নববধূকে ঘরে রেখে, পরিবার-পরিজন ছেড়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন মোস্তফা নুর বিপ্লব। করোনা রোগীদের সেবার পাশাপাশি বাথরুম পরিস্কার, রান্নাবান্না, কাপড় কাঁচা, করোনা রোগীদের গোসল দেওয়া থেকে শুরু করে সবধরনের কাজই করেছিলেন। করোনার কারণে আজ তার জীবনই সংকটে। সর্বশেষ তার ফুসফুসের ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার জন্য আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’

এর আগে জলাবদ্ধতায় আটকে পড়া আগ্রাবাদ এলাকার শ্রমজীবী মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, শহরের রেলস্টেশনে, ফুটপাথে শীতে কাবু অশীতিপর বৃদ্ধদের শরীরে গরম কাপড় জড়ানোসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন বিপ্লব।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর নুরের ছেলে বিপ্লব স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি প্রাক্তন কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানুর বড় বোনের ছেলে। এ মানবিক তরুণ নগরের আগ্রাবাদ দাইয়াপাড়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ’আলোকবর্তিকার’ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ছাত্রপরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।