চট্টগ্রাম

পোর্ট কানেক্টিং রোড : এবড়ো থেবড়ো সড়কে গাড়ি চালিয়ে নিঃস্ব মালিকরা

(Last Updated On: )

মো. মহিউদ্দিন। ১৯৯০ সালে কর্নেলহাটে একটি ছোট মনোহারী দোকান দিয়ে জীবিকা শুরু করেছিলেন। টেনেটুনে চলে যাচ্ছিল সংসার। বিয়ের পর পরিবারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধুদের পরামর্শে ২০০৭ সালে একটি পুরোনো বাস কিনে নগরীতে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। উপার্জন মোটামুটি ভাল হওয়ায় দোকান ছেড়ে দিয়ে তিনটি সিটি বাস কিনে পুরোদস্তুর পরিবহন ব্যবসায় নেমে পড়েন। নগরীর ১১ নং রুটেই চলত তাঁর চারটি বাস। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে লোকসান গুনতে গুনতে একে একে বিক্রি করেছেন সবগুলো। গত কয়েকবছর ধরে পোর্ট কানেক্টিং রোডের দুরাবস্থায় এ সড়কে চলাচলকারী ৭ এবং ১১ নং সিটি বাসের মালিকদের বেশিরভাগই আজ তার মতো নিঃস্ব।গতকাল মো. মহিউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, পরিবহন ব্যবসায় শুরুর দিকে ভালই আয় হত। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে আগ্রাবাদ থেকে অলংকার পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে দুর্দশার শুরু।
২০১৭ সালের শেষ দিকে রাস্তার কাজ শুরু হলে সে দুর্ভোগ আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায় আগ্রাবাদ থেকে বড়পুল হয়ে সাগরিকা পর্যন্ত পুরো রাস্তা। প্রতি মাসে আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচ হত গাড়ি মেরামতে। প্রতিদিন নষ্ট হত গাড়ির কোন না কোন যন্ত্রাংশ। একে একে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে প্রতিটি গাড়ি। মহিউদ্দিনের মতোই অবস্থায় এ সড়কে চলাচলকারী বাস মালিকদের। বাধ্য হয়ে অনেকেই পরিবহন ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। পাবনা থেকে চট্টগ্রামে এসে পরিবহন ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান রাজা। এ রুটে তাঁর দুটি গাড়ি চলত। সব হারিয়ে তিনি ফিরে গেছেন নিজ জেলায়। মেহেদির মত অনেক মালিকই এখন ধার-দেনায় জর্জরিত। পরিবহন ব্যবসা করতে গিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। এ রুটে চলাচলকারী একাধিক বাসের মালিক বাদল কোম্পানি, খোকন মিস্ত্রি, ঝুন্টু বাবু, সুমন মিস্ত্রি, অজিত বাবু, হোসেন মিস্ত্রি, মিলন কোম্পানিসহ প্রত্যেকের কণ্ঠে একই ক্ষোভ। কারো সবগুলো গাড়ি নষ্ট, কারো জোড়াতালি দিয়ে চলছে দু’একটি গাড়ি। কর্নেলহাট থেকে পোর্ট কানেক্টিং রোড হয়ে আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, নিউমার্কেট হয়ে আবারো একই রুটে চলাচল করে ৭ নম্বর রুটের সিটি বাসগুলো। অন্যদিকে ভাটিয়ারি থেকে কাঠগড়-ইপিজেড সড়কে চলাচল করত ১১ নম্বর মিনি বাস। নগরীর অন্যান্য রুট থেকে যাত্রী ভাল থাকায় পরিবহন ব্যবসায়ীরা এ দুই রুটে গাড়ি নামানোর প্রতিযোগিতায় নামতেন। কিন্তু এক সড়কের কারণে সে সব এখন স্বপ্ন। পোর্ট কানেক্টিং রোডের বড়পুল থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সড়কের দুরাবস্থায় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে এ রুটে বাস চলাচল।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, এ দুই রুটে একসময় দু’শ গাড়ি চলাচল করত। কিন্তু ভগ্নপ্রায় সড়কের কারণে এখন গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। অনেক গাড়ি অকেজো হয়ে গেছে। অনেক মালিক গাড়ি কেটে কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসে কঠিন গণপরিবহন সংকটে পড়বে চট্টগ্রাম।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে নিমতলা থেকে অলংকার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কটির কাজ শুরু হয়। এরপর কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও অদ্যাবধি কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। জাইকার অর্থায়নে এবং এলজিইডির ‘সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের আওতায় সড়কটির সংস্কার কাজের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।