১৮ হাজারের জন্য অর্থছাড় অনুমোদন বাকিরা পর্যায়ক্রমে ► শিক্ষক পাঁচ হাজার কর্মচারী আড়াই হাজার টাকা করে পাবেন ► মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা যাবে সরাসরি, বরাদ্দ প্রায় ৪৭ কোটি টাকা
করোনা মহামারিতে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বেতন না পেয়ে শিক্ষকদের অনেকেই পেশা ছেড়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে নগদ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য নগদ সহায়তা হিসেবে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে বাকিদের অর্থও ছাড় করা হবে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে নগদ সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। সে আলোকেই আমরা অর্থছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে সহায়তা দেওয়া হবে।’
সূত্র মতে, দেশে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের অধীন নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষককে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আর ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারী পাবেন আড়াই হাজার টাকা করে। এ জন্য ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিতকায় গত মঙ্গলবার ১৮ হাজার ২৪৭ জন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে নগদ সহায়তার অর্থছাড় অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থছাড় অনুমোদনের বিষয়টি বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে চিঠি দিয়ে চিফ অ্যাকাউন্টস ফিন্যান্স অফিসারকে জানানো হয়েছে। এখন শুধু অর্থছাড়ের অপেক্ষা। তারপর এসব শিক্ষক-কর্মচারীর নগদ/বিকাশ/রকেটের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে অর্থ।
প্রথম ধাপে ছাড় হওয়া অর্থ থেকে ১৮ হাজার ২৪৭ জনের মধ্যে ১৪ হাজার ৮৫৮ জন নন-এমপিও শিক্ষক পাবেন জনপ্রতি পাঁচ হাজার ৩০ টাকা। এতে ব্যয় হবে সাত কোটি ৪৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪০ টাকা। সমহারে ১৫৮ জন নন-এমপিও কারিগরি শিক্ষককেও অর্থ দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে সাত লাখ ৯৪ হাজার ৭৪০ টাকা।
তিন হাজার ১২১ জন কর্মচারীকে জনপ্রতি দুই হাজার ৫১৫ টাকা করে দেওয়া হবে। এতে ব্যয় হবে ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৫ টাকা। এ ছাড়া ১১০ জন নন-এমপিও কারিগরি কর্মচারী সমহারে অর্থ পাবেন। এতে ব্যয় হবে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৬৫০ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব মিলে প্রথম ধাপে খরচ হবে আট কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৫ টাকা। এই টাকা ব্যয় হবে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের অধীন ‘মুজিব শতবর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান’ শীর্ষক খাত থেকে। এ খাতে ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত শিক্ষক-কর্মচারীরাই যাতে নগদ সহায়তা পান সে জন্য বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (ব্যানবেইস) দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেইসে থাকা ৬৪ জেলার আট হাজার ৪৯২টি স্কুল ও কলেজের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক এবং ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারী মিলে মোট এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮৫ জনের তালিকা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়। সেই তালিকা ধরেই নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ অনুদান’ খাত থেকে গত বছর জেলা প্রশাসকদের কাছে অর্থ পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের চেক/ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ দেওয়া হয়েছিল। এবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক-কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৮ হাজার জনকে এই টাকা পাঠানোর পর দ্বিতীয় ধাপে ২০ হাজার জনকে টাকা পাঠানো হতে পারে।