পদ্মা সেতুর আদলে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতল ‘কালুরঘাট সেতু’ নির্মাণের যে নকশা প্রাথমিকভাবে করা হয়েছিল, সেটি বাতিল হয়েছে। সেজন্য নতুনভাবে আরেকটি নকশা তৈরি করেছে কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান, যাতে সম্মতি মিলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও।
সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, দ্বিতলের বদলে একতলা নতুন সেতুর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেতুটি হবে চার লেনের। পাশাপাশি দুই লেন থাকবে ট্রেন চলাচলের জন্য আর অপর দুই লেন থাকবে সড়কপথ। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি নকশা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন না পাওয়ায় নতুন নকশা করা হয়েছে। যাতে প্রস্তাবিত ব্যয় অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার কোটি টাকায়। প্রথমবার প্রস্তাবিত সেতুর চেয়ে এই ব্যয় ছয়গুণ বেশি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. গোলাম মোস্তফা কালুরঘাট সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা পদ্মা সেতুর আদলে যে নকশা করেছিলাম সেটি হচ্ছে না। সেটি বাতিল হয়েছে। এখন নতুন আরেকটি নকশা তৈরি করা হয়েছে। ওই নকশায় ছিল ডবল ডেকের সেতু অর্থাৎ ওপরে সড়ক আর নিচে রেললাইন। নতুন নকশায় সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে সিঙ্গেল ডেকে অর্থাৎ চার লেইনের সেতুর একপাশে থাকবে ট্রেন আসা-যাওয়ার দুটি পথ এবং অপর দুটি পথ থাকবে গাড়ি আসা-যাওয়ার জন্য।’
নতুন নকশা নিয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করেছি। নকশা উপস্থাপন করা হয়েছে, নির্মাণ ব্যয়, মেয়াদসহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নতুন নকশায় সেতু তৈরিতে সম্মত হয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন’— বলেন গোলাম মোস্তফা।
সম্ভাব্য দাতা সংস্থা কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বা দোহা প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে পদ্মা সেতুর আদলে একটি নকশা তৈরি করেছিল। গত ৬ জুলাই সেতু নির্মাণের স্থান, নকশা, ব্যয় ও নির্মাণকাল নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল, সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৭৮০ মিটার। এর মধ্যে নদীর বাইরে স্থলপথে থাকবে ৫ দশমিক ৬২ মিটার। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। মোট পিলার থাকবে ৮টি। সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার। এর ওপরের ডেকে থাকবে সড়ক এবং নিচের ডেকে রেললাইন। উভয়ই হবে দ্বিমুখী অর্থাৎ দুই লেইনের। সড়কে হেঁটে পারাপারের জন্য দুই পাশে আলাদা লেন থাকবে। বিদ্যমান কালুরঘাট সেতু থেকে ৭০ মিটার উজানে অর্থাৎ উত্তরে নতুন সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল।
একই প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা সেতুর নতুন নকশার বিষয়ে ফোকাল পারসন গোলাম মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর স্থান, দৈর্ঘ্য-উচ্চতাসহ সবকিছুই আগের মতো থাকবে। শুধু চার লেনের হওয়ায় প্রস্থটা বেড়ে গেছে। সেতুটি এখন প্রায় ৬৫ ফুট প্রস্থ হবে।’
সুত্র :সারাবাংলা