ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী এলমা চৌধুরীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি তাদের। সেই সঙ্গে তারা এ মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজিত বাংলার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এমন দাবি করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এলমা চৌধুরীকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। সুরতহালে এলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরিবারের অভিযোগ, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে এলমা চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে।
এলমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে এলমার সহপাঠী ছাড়াও অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন রেজওয়ানা চৌধুরী, কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ শামিমা বানু প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল ‘স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের পাশবিক ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এলমা চৌধুরীর হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ’।
মানববন্ধনে রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ‘এলমার স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে তার শরীরে এত দাগ থাকবে কেন? হাসপাতালে যাওয়ার পর তার এ দৃশ্য দেখে আমি মানতে পারছি না। তার স্বামীকে দেখে অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে এবং তার কথাবার্তা খুবই অসংলগ্ন। নৃত্যকলা বিভাগের পক্ষ থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’ শিক্ষার্থীদের নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত ‘ভেবেচিন্তে’ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এলমা চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া। এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এলমার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাকে মানসিকভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে। এটি খুবই মর্মান্তিক। এটি স্পষ্ট একটি হত্যা। আমরা এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্ত দাবি করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলমার পরিবারের পাশে আছে।’
কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এলমার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুধু মর্মান্তিক নয়, নৃশংসও বটে। আমরা এর দ্রুত বিচার দাবি করছি। আমাদের দেশে বিচারপ্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়। এলমার স্বামী প্রভাবশালী বলে আমরা জেনেছি। অনেক সময় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয় না। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।’
এলমার বিভাগের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এলমা খুবই বন্ধুসুলভ ছিল। রক্ষণশীল এক প্রবাসী ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হয়ে ঘরোয়াভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা দেখতে পাই যে সে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে তার স্বামী তাকে বাধা দিত। সে ঘর থেকেও বের হতে পারত না। বের হলেও তার সঙ্গে একজন গার্ড (পাহারাদার) দিয়ে রাখতেন এবং সে কোথায় কী করছে, তার সবকিছু স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে তদারক করত।’
এলমার মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল তার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে আটক করেছে পুলিশ। ইফতেখার কানাডাপ্রবাসী। গত রোববার তিনি ঢাকায় ফেরেন। রাজধানীর বনানীর একটি বাসায় থাকেন তারা।