দুই দিন ধরে ঢাক-ঢাল ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাঁজিয়ে সাপেকাটা এক তরুণীর চিকিৎসা করছিলেন এক কবিরাজ ও তার দল। ৩৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই তরুণীকে সুস্থ করে তোলার চুক্তি করেন তারা। কিন্তু ওই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পালিয়ে যায় কবিরাজের দল। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ অসুস্থ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরেন তিনি।
জানা গেছে, কথিত ওই কবিরাজের নাম মো. আলী আকবর হোসেন। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার দলের সদস্যরা হলেন একই উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের মো. তফেল, মো. হাফিজুল, মো. বাপ্পি, মো. হানিফ ও মো. শাজাহান।
স্থানীয়রা জানায়, গত রোববার রাতে ওই তরুণীকে সাপ বা বিষাক্ত কোনো পোকা কামড় দেন। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তাকে ওই রাতেই কবিরাজ আলী আকবরের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝাড়ফুঁক শেষে আবার বাড়ি ফিরে গত মঙ্গলবার ওই তরুণী ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন কবিরাজ মো. আলী আকবরকে ডেকে নিয়ে আসেন তরুণীর স্বজনরা।
কবিরাজ ও তার দল তরুণীর বাড়ির আঙিনায় সামিয়ানা টাঙিয়ে কলাগাছ পুতে মোমবাতি আগরবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে তরুণীর চিকিৎসা শুরু করেন। একই সঙ্গে ঢাক-ঢোল ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে তরুণীকে ঝাঁড়ফুঁক দিতে থাকেন। গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এভাবে চলে কবিরাজদের ঝাঁড়ফুঁক। খবর পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়।
তরুণীর স্বজনরা জানান, ওই তরুণীকে আধ্যাত্মিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন কবিরাজ। ৩৭ হাজার টাকা চুক্তিতে ছয় সদস্যের কবিরাজ দলের খাওয়া-থাকা রোগীর অভিভাবক বহন করবে বলে চুক্তি হয়। এই সময়ে ডেকোরেশনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও তাদের বহন করার কথা ছিল। তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগীকে সুস্থ করে তোলার গ্যারান্টি দেন কবিরাজ।
তরুণীর বাবা জানান, ওই কবিরাজের চিকিৎসায় সাপেকাটা অনেক রোগী ভালো হয়েছে। এই বিশ্বাসে তিনি ওই কবিরাজের সঙ্গে ৩৭ হাজার টাকা চুক্তি করে টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন।
জাহাঙ্গীরনগর ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার নামে ভণ্ডামি চলছিল। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ নিয়ে গেলে কবিরাজ ও তার দল পালিয়ে যায়।’
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মহিদুল আলম বলেন, ‘ওই কবিরাজকে আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’