বিনোদন

জমজমাট প্রচারে আঁচড় বসিয়েছে শিমু হত্যা

(Last Updated On: )

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচন ২৮ জানুয়ারি। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দুটি প্যানেল। একটির নেতৃত্বে আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ। অন্য প্যানেলে নেতৃত্বে আছেন মিশা সওদাগর-জায়েদ খান। এ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে জেগে উঠেছে ঘুমিয়ে পড়া চলচ্চিত্রাঙ্গন। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শিল্পীদের আসা-যাওয়ায় জমজমাট বিএফডিসি। চলছে নানা মিটিং, মিছিল ও বাদ্য-বাজনার আয়োজন। সবাই সবার মতো করে প্রচার চালাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।

নির্বাচন ঘিরে জমজমাট অবস্থায় আঁচড় বসিয়েছে স্বামীর হাতে সম্প্রতি খুন হওয়া অভিনয়শিল্পী রাইমা ইসলাম শিমু! ২০১৭ সালে মিশা-জায়েদ প্যানেল কমিটি ক্ষমতায় আসার পর সমিতি থেকে ভোটাধিকার হারানো আলোচিত ১৮৪ শিল্পীর একজন শিমু। তার সদস্যপদ বাতিল করে দিয়ে সহযোগী সদস্য করা হয়। ভোটাধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করেছিলেন তিনি। চার বছর ধরে যিনি সহযোগী সদস্য থেকে নিজের সদস্যপদ ফিরে পেতে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন, সেই শিমু মৃত্যুর পর দিনই সমিতির সদস্য হয়ে গেলেন! ১৯ জানুয়ারি এফডিসিতে তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ব্যানার তৈরি করেছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। ব্যানারগুলোতে শিমুর পরিচয় দেওয়া হয়েছে- ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সদস্য চিত্রনায়িকা শিমু’। এ ব্যানার নিয়ে চলছে আলোচনা। হচ্ছে সমালোচনা। শিমুর ভোটাধিকার বাতিলের ব্যাপারে বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সংবিধান অনুযায়ী টানা দুই বছর চলচ্চিত্রে কাজ না করায় শিমুর ভোটাধিকার বাতিল করা হয়। তার সদস্যপদ বাতিল করে সহযোগী সদস্য করা হয়।’ অথচ বাস্তবতা বলছে- সমিতিতে এখনো অনেক সদস্য রয়েছেন, যারা টানা দুই বছরের অধিক সময় ধরে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। এমন অনেক সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। সেটি কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি!

যে ১৮৪ শিল্পী ভোটাধিকার হারিয়েছেন, তাদের কিছু শিল্পীকে নিয়ে কেঁদেছেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী রিয়াজ, যা নিয়েও হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আবার ভাইরাল হওয়া রিয়াজের সেই কান্না দেখে কড়া সমালোচনা করেছেন দুবারের নির্বাচিত শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান! তিনি বলেন, এই কান্না পুরোই মেকি ও হাস্যকর। এসব কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এফডিসি ও শিল্পীরা সার্কাসে পরিণত হচ্ছেন। রিয়াজ ভাই সম্মানিত একজন শিল্পী। তার কাছ থেকে এমনটি মোটেও আশা করিনি! সেদিন কাঁদতে কাঁদতে রিয়াজ বলেন, ‘ভোটাধিকার হারানো এই মানুষগুলোর কান্না থামিয়ে মুখে হাসি ফিরিয়ে দিতে চাই। এই মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকান। তাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে।’ এদিকে কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের প্রার্থী ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন শারীরিক সমস্যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে অনাগত সন্তানের কথা ভেবে। কিন্তু নির্বাচন থেকে পরীমনির সরে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জাহিদ হোসেন।

এতকিছুর মধ্যেও চলচ্চিত্রের এই দুঃসময়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নির্বাচনে আসায় তাকে অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সবাই আশা ব্যক্ত করছেন কাঞ্চনের শক্ত নেতৃত্বে দিশা ফিরে পাবে শিল্পী সমিতি। সামগ্রিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পও উপকৃত হবে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, অনুদান বা সাময়িক অর্থ সাহায্য নয়; শিল্পীরা যেন নিয়মিত কাজ করে খেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবেন তিনি ও তার প্যানেল জয়ী হলে। দেখুন আমার সিনিয়র অনেকেই চলে গেছেন। রাজ্জাক ভাই নেই। দুজন অসুস্থ হয়ে আছেন। কখন কোন দিন আমিও চলে যাব তার ঠিক নেই। আমার কিছু পাওয়ার নেই এখান থেকে। অনেক পেয়েছি। এবার দিতে এসেছি।’ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমীও। কারণ তিনি মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য হয়ে নির্বাচন করছেন। মৌসুমী ২০১৯-২১ মেয়াদে শিল্পী সমিতির নির্বাচন করেছিলেন সভাপতি পদে। সেবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে ছিলেন মিশা-জায়েদ খান! তা হলে কেন এবার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থেকে নির্বাচন করছে তিনি? এ বিষয়ে তার স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, ‘আমি আর মৌসুমী সোনারচর নামে একটি সিনেমা করতে গেলাম। আমরা যখন সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই, তখন জায়েদের অভিনয় করার কথা না। সে পরে যুক্ত হয়, তার সঙ্গে অনেক কথা হয় এবং তাকে আমরা বুঝতে পারি। তা ছাড়া মৌসুমী গণমাধ্যমে বলেছে- করোনার মধ্যে মিশা-জায়েদের যে কাজ, সেটি প্রশংসার যোগ্য, সেগুলো বিচার করেই মৌসুমী তাদের সঙ্গে নির্বাচন করতে গেছে।’

এদিকে প্রার্থীরা যে যার মতো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে দুই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চিত্রনায়ক জায়েদ খান বলেন, ‘তাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে ভূমিহীন শিল্পীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করবেন। আমাদের অনেক শিল্পী আছেন যারা ভূমিহীন। তারা সারাজীবন অল্প টাকায় কাজ করেছেন। তাদের বাসস্থান সমস্যা রয়েছে। তাদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করব আমরা।’ আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ বলেন, ‘জয়ী হতে পারলে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনব। উনি ছাড়া এফডিসিকে বাঁচানো আর সম্ভব না। প্রধানমন্ত্রীকে দেখাব, উনার বাবার গড়া এফডিসি এখন কী অবস্থায় আছে। আমাদের তিন ও চার নম্বরের সব ফ্লোর ভেঙে গেছে। উনি যদি একবার আসেন, তা হলে পুরো এফডিসির চেহারা পাল্টে যাবে।’

উল্লেখ্য, কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে সহসভাপতি পদে রিয়াজ ও ডিএ তায়েব, সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহানুর, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নিরব, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে আরমান, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ইমন, কোষাধ্যক্ষ পদে আজাদ খান নির্বাচন করবেন। এই প্যানেল থেকে কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে অংশ নেবেন অমিত হাসান, শাকিল খান, ফেরদৌস, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, সাংকো পাঞ্জা, জেসমিন, কেয়া, পরীমনি, গাঙ্গুয়া ও সীমান্ত। অন্যদিকে মিশা-জায়েদ প্যানেলে সহসভাপতি পদে লড়বেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও রুবেল, সহসাধারণ সম্পাদক পদে সুব্রত, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আলেকজান্ডার বো, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে জয় চৌধুরী, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে জেকে আলমগীর, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে লড়বেন ফরহান। কার্যকরী পরিষদের সদস্যপদে আছেন রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, মৌসুমী, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, আলীরাজ, সিমলা, নাদের খান ও হাসান জাহাঙ্গীর।