করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী জারি করা সরকারি বিধি নিষেধ কঠোরভাবে পালন এবং সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
গত মাসের ৩০ ও ৩১ তারিখে এ সংক্রান্ত দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী (রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ, এবং খুুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট) এলাকাতে সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যাচ্ছে।
উপরন্তু, ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আলোচনায় পরিলক্ষিত হয় যে, স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরেও বড় আকারে সংক্রমণ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হতে পারে। যেমনটি বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা গেছে। সাম্প্রতিককালে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধে জনপ্রশাসনের ভূমিকা উল্লেখ করে সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ গ্রহণের কথা বলা হয়-
ক) সঠিক ভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা
খ) রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করা (টেক-অ্যাওয়ে ব্যবস্থা চলতে পারে)
গ) সকল প্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা
ঘ) পর্যটন স্থান/ বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখাসংক্রমণের উচ্চহার বিবেচনায় সীমান্ত এলাকাসমূহ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে
ক) সীমান্তবর্তী জেলা ও উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া।
খ) জরুরী সেবায় নিয়োজিত ছাড়া সকল জনগণকে বাড়িতে থাকার আদেশ দেয়া।
গ) সীমান্তবর্তী জেলা সমূহে অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা ও টহলের পরিমাণ বাড়ানো।ঘ) তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কার্যক্রম গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষমতা অর্পণ করা।
এছাড়া সীমান্তবর্তী সকল জেলাসহ উচ্চ সংক্রমিত এলাকা থেকে আন্তঃ জেলা গণপরিবহন বন্ধ করা এবং জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের বিধি নিষেধ পালনে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সভায় উল্লেখ করা হয় ।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধের প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয় সভায়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কোনো নতুন সংক্রমণ নয়
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ যা নতুন নয়। এই সংক্রমণ আগেও দেখা গেছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েড মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। এরই প্রেক্ষিতে এই সংক্রমণ দেখা যেতে পারে। পরামর্শক কমিটি
(১) কোভিড-১৯ চিকিৎসা গাইডলাইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্তকরণ
(২) প্রয়োজনীয় ঔষধের মজুদ সংরক্ষণ এবং(৩) স্টেরয়েড এর যৌক্তিক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়।
ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের সাথে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এদেশেও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে; এজন্য এখনই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) প্রস্তুত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে।