একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ চট্টগ্রামের শহীদ মিনারে রাখা হয়েছে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর শহীদ মিনারে তার মরদেহ আনা হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের একটি চৌকস টিম। এরপর তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুরে তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে। সেখানে জানাজার নামাজ শেষে এনায়েত বাজার চৈতন্য গলি পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ৮৩ বছর বয়সী এই নারী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগও ছিল তার। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।
বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত মুশতারী নারীনেত্রী ও শব্দসৈনিক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ এপ্রিল তাঁর স্বামী চিকিৎসক মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানুল হক আনসারীকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন বেগম মুশতারী। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে শহীদজায়া মুশতারী শফীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে পেয়েছেন বেগম রোকেয়া পদক।
চট্টগ্রামে নারী অধিকার আদায় ও সুরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মুশতারী শফী। বাংলাদেশ ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক তিনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি’, ‘জাহানারা ইমামকে’ এবং ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ মুশতারী শফীর উল্লেখযোগ্য রচনা।
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ‘বান্ধবী’ নামে মাসিক সাময়িকী প্রকাশ করেছিলেন মুশতারী শফী। বাংলাদেশে নারীদের জন্য প্রকাশিত দ্বিতীয় সাময়িকী বলা হয় ‘বান্ধবী’কে। বান্ধবী সংঘ প্রচারের সময় মেয়েদের প্রেস নামে একটি ব্যতিক্রমী মুদ্রণ সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন লড়াকু এই নারী।
মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরে।