জাতীয়

ঘুষ খেয়ে গুদাম ভরলেন নষ্ট চাল দিয়ে!

(Last Updated On: )

শর্ষের ভিতরেই যদি থাকে ভূত তা তাড়ানোর সাধ্য কার আছে? যে খাদ্য কর্মকর্তাকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছে বেছে বেছে ভাল চাল কেনার, সেই যদি অনৈতিকভাবে পুরাতন আর লাল চাল কিনে গুদাম ভরে রাখে তাহলে আপনার অভিযোগের জায়গা কোথায়?

বিপুল পরিমাণ অর্থ ঘুষের মাধ্যমে মিল মালিকদের কাছ থেকে নিম্নমানের লাল চাল সংগ্রহ করছেন বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. হুমায়ুন কবির। শুধু তাই নয় এই কবিরের নামে রয়েছে দুর্নীতির নানা অভিযোগ। বিভিন্ন বস্তা থেকে চাল সরিয়ে ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেক ইউপি সদস্য। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মিল মালিকদের কাছ থেকে ধানের বিনিময়ে চাল সংগ্রহের কথা থাকলেও এই কর্মকর্তা করছেন উল্টোটা। গত বছরের পুরাতন লাল নষ্ট চাল ট্রাকের পর ট্রাক আনলোড করছেন গোডাউনে।

সরজমিনে গোডাউনে গিয়ে দেখা যায়, চাল ভর্তি দুটি বড় সাইজের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে গোডাউনের সামনে। শ্রমিকরা দ্রুত চাল গোডাউনে খালাস করতে ব্যস্ত। প্রশ্ন করতেই তারা বলেন- ‘বড় কর্তা ভিতরে তারা এই বিষয়ে কিছুই যানেন না।’ তবে এর আগেও আরও একটি ট্রাক খালাস করা হয়েছে এই গোডাউনে। কতটন চাল সেই খবর দিতে না পারলেও সারাদিন চাল উঠানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন এই শ্রমিকেরা।

ভিতরে গিয়ে পাওয়া গেল বড় কর্তাকে। তিনি নিজেকে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নিজের নাম বলেন ‘হুমায়ুন কবির’। দ্রুত এমন করে চাল খালাস করছেন কেন? প্রশ্ন করতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান তিনি। এতো লাল চাল আপনি কিভাবে কিনলেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারছিলেন না। উল্টো হাত পা ধরে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এমনকি বিধিবহির্ভূতভাবে ৫০ কেজির বস্তায় করে চাল কিনেছেন তিনি।

কতো টাকা ঘুষের বিনিময়ে গরিব অসহায় মানুষদের কপাল পুড়ছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘জেলা খাদ্য কর্মকর্তা জানেন না ৫০ কেজির চাল সংগ্রহ করা যাবে।’

মিল মালিক শামিম জানান, ‘আমারা ঘুস দিতে পারি না তাই আমাগো চাল নেয় না, যারা ঘুস দেয় তাদের বোজন চাল যা লাল হয় সেই চালও সংগ্রহ করছে এই কবির। টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না সে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস.এম সাদিক তানভীর বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি আগামী সপ্তাহে আসব। তিনি এমনটা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি বরগুনা জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি ছুটিতে ছিলাম এসে গুদাম চেক করেছি ৪১ টন চাল পেয়েছি কিন্তু রেজিস্ট্রারে চাল উল্লেখ নাই। তাই এই চাল মিল মাকিককে ফেরত দেওয়া হবে।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে বলছি, অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কর্মকর্তাদের এই ছুটির সুযোগে এই চাল কাদের দিয়েছেন, কোথায় সরিয়েছেন এমন প্রশ্ন সবার মনে।