টিকাকেন্দ্রে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে যখন মানুষকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে, সেই সময় নিজের ঘরে বসে টিকা নিয়েছেন চট্টগ্রামের দুই ব্যক্তি।
এই দুই ব্যক্তির একজন টিকা নেওয়ার ছবি ফেইসবুকে দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।
টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি ভ্যাকসিন কেন্দ্রের দায়িত্বরত ব্যক্তি বাসায় গিয়ে এ টিকা দেন বলে জানা গেছে।
নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন রোড থেকে রবিবার রাতে ও সোমবার ভ্যাকসিন গ্রহীতা ও সহায়তাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরা হলেন- মো. হাসান (৩৫) ও মোবারক আলী (৩৩)।
বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা নিতে যাওয়া মানুষের দীর্ঘ লাইন ও নিবন্ধনের কয়েক সপ্তাহ পরও টিকা নেওয়ার এসএমএস না পাওয়ায় ভোগান্তি আছে সাধারণ জনগণের মধ্যে।
সরকারের গণটিকা কর্মসূচিতে গত ৭ অগাস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে কেন্দ্রে ৯০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকাদানে বয়স্ক নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই শনিবার নিজ ঘরে বসে টিকা নেওয়ার ছবি ও সহযোগিতাকারীকে ধন্যবাদ দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেন মো. হাসান নামের এক ব্যক্তি।
হাসান পোস্টে উল্লেখ করেন, “ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। অশেষ ধন্যবাদ বন্ধু মো. মোবারক আলীকে কভিড ভ্যাকসিন প্রদানে সহায়তা করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ মর্ডানার ১ম ডেজ সম্পন্ন।”
পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর রোববার রাত থেকে হাসানের ফেইসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আবু বক্কর সিদ্দিক।
তিনি বলেন, “হাসানের সাথে সাজ্জাদ নামে তার এক বন্ধুও বাসায় বসে ভ্যাকসিন নিয়েছেন। মোবারক নামে এক ব্যক্তি তাদের সহায়তা করেছেন বলে হাসান নিজেই ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন।”
এ ঘটনায় সোমবার মোবারককে আটক করা হয়েছে এবং সাজ্জাদকে আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এডিসি বক্কর।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। তারা কিভাবে, কার মাধ্যমে ঘরে বসে ভ্যাকসিন নিয়েছিল, সেগুলোর অনেক কিছুই আমরা জেনেছি। তাদের ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।”
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা ‘সরকারি টিকা আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে ব্যবহারের’ অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৭৯, ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় চার জনকে আসামি করে মামলা করেছেন খুলশী থানায়।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ডা. তপন কুমার চক্রবর্ত্তীর করা মামলায় বলা হয়েছে, হাসানকে তার বন্ধু মোবারক আলী জানিয়েছিলেন, সিটি করপোরেশনের মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত বিষু দে নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে বাসায় টিকা দেওয়া যাবে।
গত ৭ অগাস্ট দুপুরে জাকির হোসেন বাই লেইনে জোনাব আলী ভবনে মোরশেদ আলীর বাসায় গিয়ে বিষু দে জনপ্রতি এক হাজার টাকার বিনিময়ে হাসান ও তার বন্ধু সাজ্জাদকে টিকা দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।