চট্টগ্রাম

কথা রাখেনি সাত প্রতিষ্ঠান, বাতিল হচ্ছে চুক্তি

(Last Updated On: )

প্রায় তিন বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আইকনিক সাইন’। ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিও করে সিটি করপোরেশন। নগরের দুই নম্বর গেট মোড়ের পূর্বপাশ, বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পশ্চিমে, চকবাজার প্যারেড কর্নারের উত্তর-পশ্চিম কর্নারে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সৌন্দর্যবর্ধন যাত্রী ছাউনি কিছুই করেনি।

একইভাবে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর কাস্টমস মোড় থেকে পতেঙ্গা মোড় পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে ১৪টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের চুক্তি করে আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এবি কর্পোরেশন’। কিন্তু তারাও করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি।
এভাবে নগরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে অনিয়ম ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় এরকম সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সেইসঙ্গে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি মোতাবেক কাজ করছে কিনা সেই ব্যাপারে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন মেয়র।

গত ২৫ জানুয়ারি চসিকের স্থায়ী কমিটির সভায় এ ঘোষণা দেন চসিক মেয়র। আগামী সাধারণ সভায় চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করায় চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি বাতিল করা হবে বলে চসিক সূত্রে জানা গেছে। 

এরআগে ২০২০ সালের অক্টোবরে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করে চসিকের রাজস্ব বিভাগ। সেসময় চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন মো. মুফিদুল আলম। তিনিই ওই প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে সৌন্দর্যবর্ধনের ৪২টি চুক্তির কথা উল্লেখ ছিল। তখনই সৌন্দর্যবর্ধনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়টি ওঠে আসে। তবে তার আগে ওই বছরের ১৯ আগস্ট চসিকের আইন কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন জমা দেন সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে।

সে সূত্রেই সরেজমিন যাচাইয়ের সুপারিশের পর রাজস্ব বিভাগ প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে ছয়টি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মেনে কাজ করার কথা উল্লেখ করা হয়। বাকি ৩৬টি প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান কোনো কাজই করেনি। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চুক্তি বহির্ভূত দোকান নির্মাণ করে ফুটপাতে। করোনা পরিস্থিতির জন্য কাজ করতে না পারার কারণ দেখিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান চুক্তি লঙ্ঘন করে পরবর্তীতে তাদের সংশোধনের সুযোগ দেয় চসিক।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চুক্তি ভঙ্গ করে অপ্রয়োজনীয় যাত্রীছাউনির নামে দোকানপাট নির্মাণ করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তাই এসকল অনুমোদনহীন যাত্রীছাউনি ও বিলবোর্ড স্থাপনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে চসিক। সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে যারা চুক্তি মোতাবেক কাজ সম্পূর্ণ করেনি তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তি মোতাবেক কাজ করেছে কিনা সে ব্যাপারে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন মেয়র। সে প্রতিবেদন এলে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিল হতে পারে আগামী সভায়।’

যেভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে:

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত মিড আইল্যান্ড, রাস্তার উভয়পাশ ফুটপাত ও গোলচত্বর এবং সল্টগোলা ক্রসিং থেকে শাহীন গলফ ক্লাব পর্যন্ত মিড আইল্যান্ড ও রাস্তার উভয়পাশ ল্যান্ডস্কেপিং, সবুজায়ন ও আলোকায়ন করার চুক্তি করে করে ‘এক্সেসিভ মিডিয়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সেসময় কোনো কাজ শুরু না করায় প্রতিষ্ঠানটি সাবেক প্রশাসকের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করে। তারপরেও চুক্তি মোতাবেক তারা কাজ করেনি।

২০১৯ সালের ১ নভেম্বর ঈদগাহ কাঁচা রাস্তা থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ও মিডআইল্যান্ড সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য চুক্তি করে ‘লীরা আর্ট’নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। তারাও চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ‘মিডিয়া টেন্ডস’নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করে দুই নম্বর গেট মোড়, শেখ ফরিদ মার্কেটের কর্নার থেকে এসএ পরিবহন কর্নার পর্যন্ত আধুনিকায়ন ও নাগরিক সুবিধার উন্নয়নে কাজ করার। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানটিও চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি। একইভাবে খুলশীর একটি ক্লাবও চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি।