‘করোনায় কাম হারাইছি, দুই দিন যাবৎ কিছুই খাই নাই—তাই চুরি করছি।’ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মানিবাগ চুরির অভিযোগে আটক জুয়েল (২২) নামে এক যুবক পুলিশ সদস্যদের কাছে এ কথা বলেন।
সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরের দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের অষ্টম তলা থেকে এক রোগীর মানিব্যাগ চুরির অভিযোগে জুয়েলকে আটক করেন আনসার সদস্যরা।
আটকের পর কয়েকজন আনসার সদস্য তার হাত বেঁধে গলায় ‘আমি চোর, আমাকে চিনে রাখুন’ লেখা একটি কাগজের প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে পুরো হাসপাতালে ঘোরান।
এক পর্যায়ে আটক জুয়েলকে ওই অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পে নেওয়া হয়। আটক জুয়েলের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া তার হাতের বাঁধন খুলে তাকে খাবার খেতে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আনসার সদস্যরা ওই যুবককে যখন গলায় আপত্তিকর কার্ড ঝুলিয়ে হাসপাতালে ঘোরাচ্ছিলেন, তখন তিনি হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তখন তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেন—‘করোনার সময় আমি কাম হারাইছি, দুই দিন যাবত তেমন কিছু খাই নাই। তাই চুরি করতে হাসপাতালে আসছি’।
আটক জুয়েল জানান, তার বাড়ি বরিশালের কাউখালী উপজেলার। তিনি গুলিস্তানের ফুটপাতে হোটেলে ভাত রান্নার কাজ করতেন। করোনাকালে সেই হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। তার হাতে কোনো কাজ নেই। গত দুই দিন যাবত তেমন কিছুই খেতে পাননি তিনি। তাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন খাবারের সন্ধানে।
পরে নতুন ভবনে এক রোগীর পাশে মানিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে, সেটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন জুয়েল।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে এভাবে অভিযুক্ত করে গলায় অপরাধের বিবরণ বা আপত্তিজনক কোনো পরিচয়পত্র বা প্ল্যাকার্ড ঝুলাতে পারেন না। এ নিয়ে উচ্চ আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, ওই যুবককে নিয়ে আনসার সদস্যরা যা করেছেন তা আইন অনুযায়ী হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি জানান, বাদী জুয়েলকে ধরিয়ে দিয়েছেন মানিব্যাগ চুরির অপরাধে। একটি কাগজে চোর লিখে জুয়েলের গলায় ঝুলিয়ে হাসপাতালে ঘোরানো হয়েছে। যেন সবাই তাকে চিনে রাখেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্লাটুন কমান্ডার বলেন, হাসপাতালে প্রায়ই রোগীদের টাকা-পয়সা চুরি হয়ে যায়। কিন্তু আমরা ধরতে পারি না। মঙ্গলবার ওই চোরকে ধরে অন্য চোরদের সর্তক করতেই গলায় এমন কার্ড ঝুলিয়ে তাকে হাসপাতালে ঘোরানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে এমনটা তারা করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনেরা তো জুয়েলকে হাতেনাতে ধরেছে।
হাসপাতালের নতুন ভবনের রোগী তাইজুল ইসলাম হৃদয় বলেন, আমি হাসপাতালের বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পাই আমার মানিব্যাগটা নিয়ে ওই যুবক নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তখন তাকে ধরে ফেলি।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘দুই দিন ধরে তেমন খাবার পাচ্ছেন না।’ এজন্য তাকে হোটেল থেকে ভাত এনে খাওয়ানো হয়। তার বিরুদ্ধে আগে কোনো অপরাধের তথ্যও পাওয়া যায়নি। যার ম্যানিব্যাগ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তিনিও কোনো অভিযোগ দিতে চাননি। এজন্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান ঘটনার বিস্তারিত শুনে বলেন, ঘটনাটি সংস্থার নিজস্ব ব্যাপার। তবে যুবকের গলায় চোর লিখে পুরো হাসপাতালে ঘোরানো—এটা আইনে নেই।