বিনোদন

তুরস্কের সিরিয়াল আরব দুনিয়ায় জনপ্রিয় কেন

(Last Updated On: )

আরব দুনিয়ায় রীতিমতো জনপ্রিয় তুরস্কের টিভি সিরিয়ালগুলি। এই সাফল্যের পিছনে আছে বেশ কয়েকটি কারণ।

১৫ বছর আগের ঘটনা। তুরস্কে প্রথম স্যাটালাইট চ্যানেল শুরু হয়েছে এবং সারা বিশ্ব সেই চ্যানেল দেখতে পাচ্ছে। সেই সময় মধ্য প্রাচ্যে খুবই জনপ্রিয় হলো তুরস্কের একটি সিরিয়াল। এই সিরিয়াল বা সোপগুলিকে বলা হয় ‘ডিজি’। মেক্সিকো, অ্যামেরিকা ও কোরিয়ার সিরিয়ালের বাইরে অন্য ধরনের সিরিয়াল দেখতে পেলেন সেখানকার মানুষ।

মধ্য প্রাচ্যের টিভিতে চোখ রাখা ২০ কোটি মানুষ তুরস্কের অত্যন্ত হ্যান্ডসাম ও রোম্যান্টিক অভিনেতাদের ভক্ত হয়ে পড়লেন। সিরিয়ালগুলি আরবি ভাষায় ডাব করা হতো। অভিনেতারা যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, তার নামও বদল করে স্থানীয় নাম রাখা হতো। রোম্যান্স, ভালোবাসা, পরিবার থেকে ঠিক করে দেয়া বিয়ে, বিশাল পরিবার, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া এই সিরিয়ালগুলি প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে দেখানো ছিল খরচসাধ্য।

তা সত্ত্বেও ‘নূর’, ‘১০০১ নাইটস’, ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি’, ‘রেসারেকশন’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলি আরব দুনিয়ার মন জয় করতে পেরেছিল তার বিশ্বাসযোগ্য প্লট, সুন্দর আউটডোর লোকেশন এবং চালু গানের ঠিকমতো ব্যবহারের জন্য। তবে এর থেকেও বেশি কিছু ছিল।

প্রথমত, ডিজি সিরিয়ালগুলি তুরস্কের সেন্সর কর্তৃপক্ষ দ্য রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন সুপ্রিম কাউন্সিলের ছাড়পত্র পেয়েছিল। তাই নৈতিক মূল্যবোধের বিরোধী এবং অশোভন কোনো দৃশ্য সিরিয়ালে থাকত না।

দ্বিতীয়ত, সাবটাইটেল নয়, সিরিয়ালগুলিকে ডাব করা হতো, আর সেটাও সিরিয়ান অ্যাকসেন্টের আরবিতে। ফলে তা সহজে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। মেক্সিকো, অ্যামেরিকা, কোরিয়ার সিরিয়ালগুলি ফর্মাল আরবিতে ডাব করা হতো।

তৃতীয়ত, তুরস্কের সিরিয়ালগুলিকে আরব দুনিয়ার মানুষ সহজেই গ্রহণ করেছিলেন। যেমন ২০০৭ সালে সৌদির মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং সেন্টার তুরস্কের প্রযোজনা ‘গুমুস’ দেখায়। তবে তার নাম বদলে করা হয় ‘নূর’। এই ভালোবাসার কাহিনি ৯ কোটি ২০ লাখ দর্শক দেখেছিলেন।

তার কিছুদিনের মধ্যে আসে ‘১০০১ নাইটস’। এটা মোট ৮০টি দেশে বিক্রি হয়েছিল। খুবই সফল হয়েছিল ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি’। ইস্তানবুলের গ্লোবাল এজেন্সি এর পরিবেশক ছিল। তার প্রতিষ্ঠাতা ইজ্জেত পিন্টো ডিডাব্লিউকে বলেছেন, “সুলেইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের জীবন ও ভালোবাসা নিয়ে তৈরি ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি’ বিশ্বজুড়ে ৫০ কোটি মানুষ দেখেছিলেন।” এর ফলে তুরস্কে আরব পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বাড়ে।

‘ইসলাম-বিরোধী’, ‘বিপর্যয়কর’ সিরিয়াল

২০২০-র এপ্রিলে রামাদানের ঠিক আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করেন, উর্দুতে ডাব করা ‘রেসারেকশন: এর্তুগ্রুল’-এর মতো সিরিয়াল খতিয়ে দেখবে পিটিভি।। কিন্তু এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তা পাকিস্তানে আরো বেড়ে যায়। সিঙ্গাপুরের স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিস অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়ার ফেলো জেমস এম ডোরসে ডিডাব্লিউকে বলেছেন, “পাকিস্তানে ইসলামিক তুরস্ক রোল মডেলে পরিণত হয়।”

তবে রেসারেকশন ছিল ব্যতিক্রম। পিন্টোর মতে, “পাকিস্তানের নতুন আইন অনুসারে আর ডাব করা যাবে না, শুধু সাবটাইটেল দেয়া যাবে। এখন তুরস্কের সিরিয়ালগুলি সাবটাইটেল দিয়ে দেখানো হয় এবং পাকিস্তানে তাদের রেটিং পড়ে গেছে।”

পাঁচ বছর আগে তুরস্কের টিভি-ইন্ডাস্ট্রি মধ্য প্রাচ্য থেকে বছরে আট কোটি ডলার আয় করতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি ডলারে। পিন্টো জানিয়েছেন,” ২০১৮-এর আগে মধ্য প্রাচ্য ছিল আমাদের সব চেয়ে ভালো বাজার। কিন্তু এখন বয়কটের ডাক দেয়ার ফলে আয় ৮০ ভাগ কমে গেছে।”

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুলআজিজ আল-শেখ ২০১৮তে বলেন, “নূর হলো ‘ইসলামবিরোধী ও বিপর্যয়কর এবং যে সব চ্যানেল এই সব সিরিয়াল দেখাবে তারা মহানবী(সা)-র শত্রু।” এরপর সরকার এই সব সিরিয়াল বন্ধের ডাক দেয়।

মিশরে তুরস্কের টিভি ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ হয়। এর্দোয়ান সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসির বিরুদ্ধে সামরিক আভ্যুত্থানের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ডিজি অনলাইনে

সৌদি ও মিশরে ধাক্কা খাওয়ার পর তুরস্কও কৌশল বদল করে। এখন ইউ টিউব, নেটফ্লিক্স, এমবিসি, ওএসএনের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের সোপ দেখা যায়।

কিন্তু তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বীরাও এখন বাজার দখল করতে নেমে পড়েছে। সৌদি আরব ও আমিরাত সরকার প্রচুর অর্থব্যয়ে সিরিয়াল বানাচ্ছে। সৌদি যুবরাজ জানিয়েছেন, আগামী দশকে ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।